প্রকাশকাল: ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
ধারণাপত্র
ভূমিকা
নজিরবিহীন আত্মত্যাগের বিনিময়ে কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতন ঘটিয়ে এদেশের অজেয় ছাত্র-তরুণ প্রজন্ম আপামর জনগণের মাঝে ‘নতুন বাংলাদেশ’ বিনির্মাণের অভূতপূর্বপ্রত্যয় সঞ্চারিত করেছে। ‘নতুন বাংলাদেশ’ এর বহুমাত্রিক অভীষ্টের অন্যতম বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমতের অধিকার, যার অপরিহার্য উপাদান অবাধ তথ্যপ্রবাহ ও তথ্যে অভিগম্যতা। তথ্যের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক, সুশাসিত ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণ- সেই প্রত্যয়েরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। অবাধ তথ্যপ্রবাহ জনগণকে ক্ষমতাকাঠামোর অংশীজন হয়ে উঠতে সহায়তা করে, ক্ষমতায়িত করে, সর্বোপরি রাষ্ট্রকাঠামোতে জবাবদিহির মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কর্তৃত্ববাদী সরকারের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করার অপচেষ্টার অন্যতম হাতিয়ার ছিলো একদিকে বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমন ও অন্যদিকে নিরেট মিথ্যাচার এবং তথ্যব্যবস্থাপনা ও প্রবাহকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ব্যবহার করা। সঠিক তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টিতে প্রতিনিয়ত সম্ভাব্য সকল ধরনের কৌশল ও পন্থা অবলম্বন করা হয়েছে। যার জ্বলন্ত উদাহরণ ধারাবাহিকভাবে প্রণীত বিভিন্ন আইন ও বিধিমালায় নিবর্তনমূলক ধারাসমূহের সন্নিবেশন ও নির্বিচার ব্যবহার। অধিকন্তুতথ্যপ্রাপ্তির অধিকার রক্ষায় গঠিত সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে বিশেষ করে তথ্য কমিশনে দলীয় ও আদর্শিক অনুগতদের নিয়োগের মাধ্যমে স্বাভাবিক তথ্যপ্রবাহে অনুঘটকের ভূমিকা পালনকারীদের কর্মকান্ডকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। সম্প্রতি জাতির উদ্দেশ্যে প্রদত্ত ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ‘তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে’ মর্মে যে ঘোষণা দিয়েছেন-তা আমাদের আশান্বিত করেছে। আর তাই "নতুন বাংলাদেশ : চাই বাকস্বাধীনতা, চাই তথ্যে অবাধ অভিগম্যতা" প্রতিপাদ্যে টিআইবি এ বছর ‘আন্তর্জাতিক তথ্য জানার অধিকার দিবস’ উদযাপন করছে।
তথ্য গোপনীয়তার সংস্কৃতি: বাংলাদেশ
তথ্য গোপনীয়তার সংস্কৃতি আমাদের জন্য নতুন কিছু নয়। তবে বিগত বছরগুলোতে কর্তৃত্ববাদী সরকার তার কায়েমিস্বার্থে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের প্রতিটি পর্যায়ে যে কাঠামোবদ্ধ মিথ্যা ও অপতথ্যের বিস্তার ঘটিয়েছে, তা অন্য যে-কোনো সময়ের তুলনায় মাত্রা ও পরিমিতি বোধে তীব্রতর ছিলো। যার জ্বলন্ত উদাহরণ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকারের মিথ্যাচার ও যে-কোনো উপায়ে সঠিক তথ্যপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা। আন্দোলন স্তিমিত করার স্বার্থে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে ইন্টারনেট বন্ধের মাধ্যমে প্রকৃত ঘটনা ও তথ্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি ইন্টারনেট বন্ধের পেছনে একেক সময় একেকরকম হাস্যকর কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। নিহত ও আহতদের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা হয়েছে। বিগত সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত তিনটি নির্বাচন থেকে শুরু করে উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড এমনকি জিডিপি ও রপ্তানি আয়ের পরিসংখ্যান সংক্রান্ত নানামুখী মিথ্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। ঋণখেলাপি, অর্থপাচারসহ ব্যাংকিং খাতের ভঙ্গুর পরিস্থিতির সঠিক তথ্য লুকাতে সরকারের অশুভ প্রয়াস ছিলো সর্বজনবিদিত। বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির পাশাপাশি প্রভাবশালী ঋণখেলাপিদের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের বাইরে যে অর্থ পাচার হয়েছে, তারও সঠিক কোনো পরিসংখ্যান আমাদের জানা নেই।
পুরো ধারণাপত্রের জন্য এখানে ক্লিক করুন