তথ্য অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

প্রকাশকাল: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০

২০১৯ এর ১৫ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে ২৮ সেপ্টেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক সার্বজনীন তথ্যে অভিগম্যতা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।  যদিও এমন স্বীকৃতি আদায়ের প্রথম প্রচেষ্টা বা দাবি বেসরকারি তথা নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হয় ২০০২ সালে বুলগেরিয়ার সোফিয়ায় অনুষ্ঠিত তথ্য অধিকার কর্মীদের আন্তর্জাতিক সম্মেলন থেকে। যার প্রথম আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আসে ২০১৫ সালে ইউনেস্কোর ৩৮তম সম্মলেনে ২৮ সেপ্টেম্বরকে ‘আন্তর্জাতিক সার্বজনীন তথ্য অধিকার দিবস’ ঘোষণার মাধ্যমে। 
তথ্য প্রাপ্তির অধিকার চিন্তা, বিবেক ও বাক্-স্বাধীনতার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ  হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ‘তথ্য অধিকার আইন’ পাশ করা হয়। বাংলাদেশের তথ্য অধিকার আইন অনেক শক্তিশালী। গ্লোবাল রাইট টু ইনফরমেশন রেটিং ২০১৯ অনুযায়ী ১২৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের আইনটির অবস্থান ২৯তম,  যা এই আইনের ফলে বাংলাদেশের জনগণের তথ্যে অভিগম্যতা নিশ্চিতে সৃষ্ট সুযোগের একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত। তথ্য অনুসন্ধান, প্রাপ্তি এবং তথ্য প্রকাশ ও উৎপাদনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করা স্বাধীন মতপ্রকাশের অবিচ্ছেদ্য অংশ। Universal Declaration of Human Rights এর আর্টিকেল-১৯  এবং International Covenant on Civil and Political Rights এর আর্টিকেল-১৯  এ মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে এভাবেই সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা গণতন্ত্রের অত্যাবশ্যকীয় অনুসঙ্গ যা একইসাথে বাক্স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে বিবেচিত। সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা জরুরি- অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা মূলত ক্ষমতাকাঠামোকে জবাবদিহিতার সম্মুখীন করে থাকে; সংঘটিত অনিয়ম, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার প্রভৃতি সম্পর্কে জনসাধারণকে অবহিতকরণ এবং জনইস্যূতে বিতর্ককে উৎসাহিত করে থাকে।  দুর্নীতি, অনৈতিক লেনদেন এবং যা কিছু ক্ষমতাসীন, সম্পদশালী ও প্রভাবশালীরা গোপন রাখতে চায় তার তথ্য প্রমাণসহ উপাস্থাপনার মাধ্যমে গণমাধ্যম যে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ, তা নিশ্চিত করে। 
সংখ্যার বিচারে বাংলাদেশে গণমাধ্যমের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। তবে স্বাধীনতার প্রশ্নে সংখ্যার আধিক্য মত প্রকাশের স্বাধীনতার সূচক নয়। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এমন কোনো বিষয় নয় যে, তা রাজনীতির বাইরে থেকে অর্জন করা সম্ভব। সার্বিক বিবেচনায় বাংলাদেশের গণমাধ্যমে এক ধরনের শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশ বিরাজ করছে, এরূপ ধারণা ব্যাপক বিস্তৃতি লাভ করেছে। বাংলাদেশের গণমাধ্যমের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সেন্সরশিপ বা নিয়ন্ত্রণ নতুন কোনো বিষয় নয়, যা সাম্প্রতিককালে কোনো রকম রাখঢাক ছাড়াই কার্যকর হতে দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে প্রাতিষ্ঠানিক সেন্সরশিপ এবং এর ফলশ্রুতিতে সংবাদকর্মীদের সেল্ফ সেন্সরশিপের চর্চার বিস্তার লাভ করেছে এবং স্বাভাবিক হয়ে উঠছে।  এই নিয়ন্ত্রণের আইনগত ভিত্তি হিসেবে সম্প্রতি প্রণীত, উল্লেখযোগ্যহারে প্রয়োগরত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কতিপয় বিতর্কিত ধারার প্রভাব বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। একইভাবে, বৈদেশিক অনুদান (স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম) রেগুলেশন আইন, ২০১৬ এর ১৪ নং ধারা বেসরকারি সংগঠন তথা নাগরিক সমাজের জন্য সংবিধান ও সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে স্বাধীন মতপ্রকাশে বিশাল অন্তরায় সৃষ্টি করেছে।
বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন