Governance Challenges in Mobile Financial Services Sector in Bangladesh

প্রকাশকাল: ২৭ মে ২০২৫

প্রেক্ষাপট ও যৌক্তিকতা

মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএস এমন এক ধরনের আর্থিক সেবা যেখানে একটি মোবাইল ফোন নম্বরকে হিসাব বা অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচনা করে গ্রাহকদের ব্যাংকিং ও অন্যান্য আর্থিক সেবা প্রদান করা হয় এবং যাবতীয় লেনদেনের তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর সুরক্ষিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সংরক্ষণ করা হয়। বাংলাদেশে মূলত গ্রামীণ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, বিশেষ করে নারী ও নিম্মআয়ের জনগণের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে ২০১১ সালে এমএফএস কার্যক্রম চালু হয়। এমএফএস খাতের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারনী ও তদারকির দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এই খাতকে নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি করে থাকে এবং এ লক্ষ্যে সময় সময় এ সংক্রান্ত বিধিবিধান জারি ও নির্দেশনা প্রদান করে থাকে।

বর্তমানে বাংলাদেশে ১৩টি লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান এমএফএস সেবা প্রদান করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিসেম্বর, ২০২৪-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে মোট নিবন্ধিত এমএফএস হিসাবধারীর সংখ্যা প্রায় ২৩.৭ কোটি, যাদের মধ্যে ৫৮.৪ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১.৬ শতাংশ নারী। তবে এমএফএস হিসাবধারীদের মধ্যে সক্রিয় হিসাবধারীর হার প্রায় ৩৭.৬ শতাংশ (উক্ত প্রতিবেদন প্রণয়নের পূর্বের তিন মাসে কমপক্ষে একবার লেনদেন করেছে)। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুসারে এমএফএস ব্যবহার করে প্রতিমাসে প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা লেনদেন হয় এবং এক্ষেত্রে দিনপ্রতি লেনদেনের পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৩১৪ কোটি টাকা। এছাড়াও প্রায় ১৫.৪ লাখ নিবন্ধিত মার্চেন্ট হিসাবধারী এই প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে ব্যবসায়িক লেনদেন পরিচালনাসহ তাদের গ্রাহকদের ক্রয়কৃত পণ্যের পরিশোধিত অর্থ গ্রহণ করছে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা পরিশোধ, ভাতা ও উপবৃত্তির অর্থবিতরণ, বিল পরিশোধ, অনলাইন কেনাকাটা ও ব্যক্তিগত লেনদেনসহ নানা কাজে এমএফএস ব্যবহৃত হচ্ছে, যা নগদ অর্থলেনদেনের প্রয়োজনীয়তা কমিয়ে দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রমকে গতিশীল করেছে। মোবাইল আর্থিক সেবা বা এমএফএস খাত একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ডিসেম্বর, ২০২৪-এ এই খাতে প্রায় ১৮.৩ লাখ এজেন্ট কর্মরত ছিল। যারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে, বিশেষ করে গ্রামীণ ও প্রান্তিক অঞ্চলগুলোতে এমএফএস সেবা পৌঁছে দিচ্ছে।

সহজ লেনদেন প্রক্রিয়া, সেবার বৈচিত্র্য, লেনদেনের বর্ধিত সীমা, সরকারি প্রণোদনা প্রাপ্তির সুযোগ ইত্যাদি কারণে ব্যাংকিং ব্যবস্থার তুলনায় এমএফএস-এর ব্যবহার ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় থাকা ভাতা প্রদান, শিক্ষা উপবৃত্তি বিতরণ, ব্যবসায়িক লেনদেন, প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা প্রদান ইত্যাদি ক্ষেত্রে এমএফএস ব্যবহার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০২৪ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৩ সালে ১৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সী জনগোষ্ঠীর মধ্যে সার্বিকভাবে ৫১.৭ শতাংশ ব্যক্তির কোনো না কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এমএফএসপি’র অ্যাকাউন্ট বা হিসাব ছিল। শুধুমাত্র ব্যাংক হিসাবধারীর হার ছিল ২৮.৩ শতাংশ এবং শুধুমাত্র এমএফএস হিসাবধারীর হার ছিল ৪৭.৮ শতাংশ। এছাড়া এমএফএস ব্যবহার করে বিদেশ থেকে রেমিটেন্স আসার পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে - ২০২৪ সালে এমএফএসের মাধ্যমে বৈধ প্রক্রিয়ায় বিদেশ থেকে আসা রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার ৭৮৬ কোটি টাকা।

ক্রমবর্ধমান গ্রাহক সংখ্যা ও লেনদেনের পরিমাণ বিবেচনায় এমএফএস বাংলাদেশে অত্যন্তগুরুত্বপূর্ণ ও সম্ভাবনাময় আর্থিক খাত হলেও এ খাতে কিছু সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, যা বিভিন্ন গবেষণা, প্রবন্ধ, প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমে ইতোমধ্যে উঠে আসলেও মোবাইল আর্থিক সেবা খাতের সুশাসন পর্যবেক্ষণ সংক্রান্তনিবিড় গবেষণায় ঘাটতি রয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেশের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতসহ অন্যান্য জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত এবং এই চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণে বহুমুখী অধিপরামর্শ কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এমএফএস খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে এই গবেষণার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

গবেষণার উদ্দেশ্য

এই গবেষণার মূখ্য উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশে মোবাইল আর্থিক সেবা (এমএফএস) খাতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জসমূহ চিহ্নিত করা। এছাড়াও গবেষণার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যসমূহ হলো
১. এমএফএস খাতসংশ্লিষ্ট আইনি কাঠামো ও এর পরিপালন পর্যালোচনা করা
২. সুশাসনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশকের আলোকে এ খাতের স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং সক্ষমতা ও কার্যকরতা পর্যালোচনা করা
৩. এমএফএস খাতে বিদ্যমান অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্র, ধরন ও মাত্রা চিহ্নিত করা
৪. গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে সুপারিশমালা প্রণয়ন করা

বিস্তারিত জানতে নিচে ক্লিক করুন-