সংবাদ বিজ্ঞপ্তি
ঢাকা, ১৪ মার্চ ২০২৪: নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিকাণ্ড ও মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতির সমালোচনা করে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা, সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতা মর্মান্তিক অগ্নিকান্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ হিসেবে উল্লেখ করে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ তারিখ রাতে বেইলি রোডে অবস্থিত গ্রীন কোজি কটেজ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৪৬ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষিতে গণমাধ্যমে প্রেরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তি রোধে উদ্যোগী না হয়ে দায় এড়ানোর প্রচেষ্টার সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা প্রদান করেছেন এবং নানা সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স বেশ কিছু সুপারিশও প্রস্তাব করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহের নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতির কারণে এ সকল সুপারিশের বেশিরভাগ বাস্তবায়ন হয়নি। অন্যদিকে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বরাবরের মতো সমস্যার মূল কারণকে গুরুত্ব না দিয়ে লোকদেখানো “অভিযান” পরিচালনা ও এমন ব্যক্তিদের গ্রেফতার করছে যাদের নির্ধারিত দায়িত্বের সঙ্গে দূর্ঘটনার মূল কারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বললেই চলে। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানো ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’
ড. জামান আরো বলেন, ‘ধারাবাহিক এই অগ্নিকান্ড- ও প্রাণহানির পিছনে মূল কারণ হিসেবে আমরা দেখতে পাই, ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করা এবং মালিক কর্তৃক ভবনে অনুমোদনবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা। এ সকল বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাজউক, সিটি কর্পোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস এ সকল অনিয়মের বিষয়ে অবহিত। এ সকল প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ভবনের অনুমোদন ও যথাযথভাবে তদারকি না করে বাস্তবে যোগসাজসের মাধমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছে। প্রকৃত অপরাধীমহল বিচারহীনতা ভোগ করছে।’
ইতোপূর্বে পুরানো ঢাকায় একাধিকবার সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে টিআইবি ২০২০ সালে “নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর: পুরানো ঢাকার অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ” শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করেছিলো। এই গবেষণায় দেখা গিয়েছিলো, বারবার মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরেও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি এবং ব্যবসায়ী, ভবন মালিক, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ ও অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক পর্দাথের গুদাম ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়।
উল্লিখিত গবেষণাটি পুরানো ঢাকায় দাহ্য পদার্থ থেকে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডকে বিবেচনায় নিয়ে করা হলেও উক্ত গবেষণায় প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও ফলাফল ঢাকা শহরের অন্যান্য অগ্নি দুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডের কার্যকর প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতের পাশাপাশি অবিলম্বে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। আমরা দেখছি, অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় নির্মম প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য না থাকার দুঃখজনক উদাহরণ। নিরাপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত সকলের বিরুদ্ধে জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছে টিআইবি।’
প্রয়োজনীয় আইনের সংস্কারের মাধ্যমে সকল অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ প্রদান ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্যও জোর দাবি জানানো হয় টিআইবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে।
গণমাধ্যম যোগাযোগ:
মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৩-১০৭৮৬৮
ই-মেইল: tauhidul@ti-bangladesh.org