বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থান সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়

প্রকাশকাল: ৩০ মার্চ ২০২৪

শ্রম অভিবাসীর যোগানদাতা হিসেবে পরিচিত হলেও বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বিদেশি নাগরিক কাজ করেন এবং এর ফলে বাংলাদেশ থেকেও বড় অঙ্কের রেমিটেন্স তারা বাইরে পাঠান। প্রায় চার দশক আগে বাংলাদেশে বিভিন্ন শিল্পের বিকাশের সময় থেকেই বিদেশি কর্মীর প্রয়োজনীয়তা ধীরে ধীরে বেড়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বিদেশি কর্মীদের কর্মসংস্থানে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করে ২০২০ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি, যেখানে বিদেশিদের কর্মসংস্থানের আইনি-কাঠামো পর্যালোচনা, বিদেশিদের কর্মসংস্থানের কারণ, ধরন ও প্রকৃতি বিশ্লেষণ এবং বিদেশিদের নিয়োগ-প্রক্রিয়া ও বেতন-ভাতাসম্পর্কিত অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।

এই গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে একগুচ্ছ সুপারিশ প্রস্তাব করা হয় এবং পলিসি ব্রিফ আকারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সকল অংশীজনের বিবেচনার জন্য প্রেরণ করা হয়। এই হালনাগাদ পলিসি ব্রিফ বাংলাদেশে বিদেশিদের কর্মসংস্থানের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় করণীয় কী, তা চিহ্নিত করে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ অধিক কার্যকরতার সঙ্গে বাস্তবায়নে সহায়তার উদ্দেশ্যে গবেষণালব্ধ তথ্যের আলোকে প্রণীত।

গবেষণায় দেখা যায় সুনির্দিষ্ট কিছু ভিসা ছাড়া অন্য ভিসায় কাজ করার নিয়ম না থাকা সত্ত্বেও ‘‘পর্যটক ভিসা’’, ‘‘ভিসা অন অ্যারাইভাল’’ ও ‘‘বিজনেস ভিসা’’ নিয়ে বিদেশিরা এদেশে বিভিন্ন খাতে যথাযথ কর্মানুমতি ছাড়াই স্থানীয় নিয়োগদাতাদের যোগসাজশে অবৈধভাবে কাজ করছে। অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে আগমন, অবস্থান ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে না। ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই তারা নিজদেশে বা পার্শ্ববর্তী কোনো দেশে চলে যায় এবং পুনরায় একই ধরনের ভিসার জন্য আবেদন করে।

বিদেশি কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে দেশি ও-বিদেশি কর্মীর অনুপাত মানা হয় না। সাধারণত আয়কর ফাঁকির উদ্দেশ্যে বৈধ বিদেশি কর্মীর বেতন প্রাতিষ্ঠানিক নথিপত্রে কম প্রদর্শিত হয়। এক্ষেত্রে প্রকৃত বেতনের এক-তৃতীয়াংশ বৈধভাবে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয় এবং বেতনের বাকি অংশ অবৈধভাবে নগদ দেওয়া হয়ে থাকে।

বিদেশি কর্মী নিয়োগের ফলে স্থানীয় প্রার্থীরা চাকরির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয় এবং নির্দিষ্ট পদে অসম প্রতিযোগিতার সৃষ্টি হয়। অনেকক্ষেত্রেই বিদেশি কর্মী নিয়োগের কারণে বেতন-ভাতা বাবদ রাষ্ট্রের মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রার অপচয় হয়। অধিকাংশ বিদেশি নাগরিক আইন অমান্য করে হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ পাচার করছে।

বাংলাদেশে বৈধ ও অবৈধভাবে কর্মরত বিদেশি কর্মীর সংখ্যা, দেশ থেকে অবৈধভাবে পাঠানো রেমিটেন্স ও রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ উদ্বেগজনক। বিদেশি কর্মীর প্রকৃত সংখ্যা ও অবৈধভাবে পাচারকৃত রেমিটেন্সের পরিমাণ সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক তথ্য নেই।

টিআইবির প্রাক্কলন অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে কর্মরত বিদেশি কর্মীর ন্যূনতম সংখ্যা ছিল প্রায় ২.৫ লাখ, অবৈধভাবে প্রেরিত ন্যূনতম বার্ষিক রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রায় ৩.১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ২৬.৪ হাজার কোটি টাকা এবং ন্যূনতম বার্ষিক রাজস্ব ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১.৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা (১ মার্কিন ডলার = ৮৫ টাকা ধরে)।

 

পুরো পলিসি ব্রিফের জন্য এখানে ক্লিক করুন