কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ বাদ দিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ এর চূড়ান্ত অনুমোদন; রাষ্ট্রসংস্কার কী সরকারের কাছে শুধুই ফাঁকাবুলি? টিআইবি

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

ঢাকা, ২৮ নভেম্বর ২০২৫: সর্বোচ্চ মাত্রার প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতার পাশাপাশি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও কার্যকরতা নিশ্চিত করার মাধ্যমে মূলত ক্ষমতাসীনদের ইঙ্গিতে কেবল প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার এজেন্ডা বাস্তবায়নের হাতিয়ার হিসেবে পরিচিত দুদকের উত্তরণের লক্ষ‍্যে ‘‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’’ গঠনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ পদদলিত করে উপদেষ্টা পরিষদ দুর্নীতি দমন কমিশন অধ্যাদেশ, ২০২৫ চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করায় গভীর হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। জুলাই সনদে সকল রাজনৈতিক দলের সম্পূর্ণ ঐকমত‍্যসহ অন্তর্ভুক্ত এবং টিআইবির ধারাবাহিক অধিপরামর্শের ফলে এবিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সম্মতির পরও চূড়ান্ত অধ্যাদেশে তা বাদ দেওয়া শুধু হতাশাজনক নয়, সরকারের অভ্যন্তরে প্রায় সকল ক্ষেত্রে সংস্কার-প্রতিরোধক মহলের ষড়যন্ত্রের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের অভীষ্টের জিম্মিদশারও পরিচায়ক। ঐকমত্য কমিশনের প্রধান ও ১১টি সংস্কার কমিশন প্রতিষ্ঠার যুগান্তকারী সিদ্ধান্তগ্রহনকারী হিসেবে প্রধান উপদেষ্টা দুদককে জবাবদিহির বাইরে রাখার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলসহ সকল দেশবাসীকে কী এই বার্তা দিতে চাইছেন যে, রাষ্ট্রসংস্কার কেবলই ফাঁকাবুলি? এই প্রশ্নও করছে সংস্থাটি।

বিগত দুই দশকের অভিজ্ঞতা, সকল অংশীজনের মতামত, আন্তর্জাতিক উত্তম চর্চা ও বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আমলাতান্ত্রিক প্রেক্ষিত বিবেচনায় দুদক যাতে ক্ষমতাসীনদের হয়রানির হাতিয়ার হিসেবে চলমান না থাকে, সে লক্ষ‍্যে দুদক সংস্কার কমিশন ‘‘বাছাই ও পর্যালোচনা কমিটি’’ গঠনের সুপারিশ করেছিলো উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জন্মলগ্ন থেকে প্রতিষ্ঠানটি যেভাবে জনআস্থার সংকটে ভুগছে ও স্বার্থান্বেষী মহলের ক্রীড়নক হিসেবে ক্ষমতাসীনদের সুরক্ষা আর প্রতিপক্ষকে হয়রানির হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে, তা থেকে উত্তরণ ঘটাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ প্রস্তাবটি করা হয়েছিল। এই কমিটি কর্তৃক দুদকের কাজের ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে পর্যালোচনা, গনশুনানি ও পরামর্শের মাধ্যমে দুদককে প্রকৃতার্থে একটি জবাবদিহিমূলক, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠানে পরিণত করার কৌশলগত সুপারিশটি অনুধাবনে সরকার ব্যর্থ হয়েছে, যা অত্যন্ত পরিতাপের বিষয়। রাষ্ট্রসংস্কারের দায়িত্ব-প্রাপ্ত সরকারের জন্য এটি স্ববিরোধী ও সংস্কারপরিপন্থী নজির।’

ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আরও হতাশাজনক এ কারণে যে, নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে অন্তত সাতজন উপদেষ্টাও এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছেন। অথচ তারা জানেন যে এই প্রস্তাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষরকারী সকল রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে। জুলাই সনদ লঙ্ঘনের এরূপ উদাহরণ সৃষ্টি করার আগে সরকার কেন ভাবছে না যে, এর মাধ‍্যমে রাজনৈতিক দলকে তারা নিজেরাই জুলাই সনদ লঙ্ঘনে উৎসাহিত করছে? তাহলে কেন এতো রক্তক্ষয়ী আত্মত্যাগ? দুর্নীতির কার্যকর নিয়ন্ত্রণের উপায় রুদ্ধ করে কীসের রাষ্ট্র সংস্কার?’

অধ‍্যাদেশটির যে খসড়াটি টিআইবির দেখার সুযোগ হয়েছিলো, তা অনেকাংশে বিদ্যমান আইনের তুলনায় উন্নত মানের হওয়ায় টিআইবি সরকারকে সাধুবাদ জানাচ্ছে। তবে নির্ভরযোগ্য সূত্রের তথ্যানুযায়ী চূড়ান্ত অধ্যাদেশে উল্লিখিত বিষয়টির পাশাপাশি আরও কতিপয় ঐকমত্য-অর্জিত গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সুপারিশ বাদ দেওয়া হয়েছে, যা সরকারের অভ্যন্তরে স্বার্থান্বেষী ও প্রভাবশালী মহলের দুর্নীতি-সহায়ক ও সংস্কার-পরিপন্থী অবস্থান ছাড়া আর কিছু হতে পারে না মর্মে ক্ষোভ ও পরিতাপ প্রকাশ করেছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।

গণমাধ্যম যোগাযোগ:
মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৩-১০৭৮৬৮
ই-মেইল: tauhidul@ti-bangladesh.org

Read in English

ACC Ordinance 2025 approved ignoring some strategically important recommendations; Is “state reform” only a rhetoric for the Government? TIB


Press Release