৩০ জুন ২০১২

পদ্মা সেতু সরকারের জন্য অগ্নি-পরীক্ষা; বিশ্বব্যাংকের ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ, বলেছে টিআইবি

ঢাকা, ৩০ জুন ২০১২: বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতু প্রকল্পের মোট ২.৯ বিলিয়ন ডলারের ১.২ বিলিয়ন ডলার ঋণ বাতিলের সিদ্ধান্তকে দুঃখজনক, নিরাশাব্যঞ্জক ও লজ্জাজনক মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সরকারের নিকট টিআইবি জোর দাবি জানিয়েছে যেন অনতিবিলম্বে একটি সম্পূর্ণ স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও কোন প্রকার প্রভাবমুক্ত বিচারিক কমিটি গঠন করা হয় যার মাধ্যমে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্তদের দোষ প্রমাণিত হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হয়। অন্যদিকে টিআইবি বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে পুণর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে এবং অভিযোগের তদন্তে সক্রিয় সহায়তার পাশাপাশি ঋণের দরজা খোলা রাখার প্রস্তাব করেছে।   

বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিশ্বব্যাংকের সম্পর্কের এটা শেষ নয়, বরং নতুন অধ্যায়ের শুরু মাত্র। সরকারের জন্য এটা এক অগ্নি-পরীক্ষা। সরকারকে জনগণের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে, যারা দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত, সে যেই হোক না কেন প্রমাণ সাপেক্ষে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ, এবং এক্ষেত্রে কোন ভয় বা করুণার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, “এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে যে, দুর্নীতি শুধু ঘুষ আদান-প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় স্বার্থের দ্বন্দ্ব বা প্রভাব প্রয়োগ বিবেচনায় নিতে হবে।বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “টিআইবি সরকারের নিকট দাবি জানাচ্ছে যেন উত্থাপিত অভিযোগের সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত তদন্তের মাধ্যমে দোষী প্রমাণিত হলে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে একটি উচ্চ পর্যায়ের স্বাধীন ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য বিচারিক কমিটি গঠন করার জন্য। কমিটি একটি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশ প্রদান করবে যা একই সময়ে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকের এই সিদ্ধান্ত প্রশ্নবিদ্ধ, যদিও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত নয়। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অঙ্গণে নবাগত, বিশ্বব্যাংক, যার নিজের গঠিত নিরপেক্ষ মূল্যায়নে দেখা গেছে যে উন্নয়নশীল দেশে তাদের ঋণ কার্যক্রমে অর্থায়নে অনিয়মের দায়ভার তাদেরও রয়েছে, সম্প্রতি তারা মাথা ব্যথার ধারণা থেকে মাথা কেটে ফেলার নিয়ম অনুসরণ করছে।

এরূপ অবস্থানের মাধ্যমে দেশবাসীকে বঞ্চিত না করে বিশ্বব্যাংকের উচিত একদিকে বাংলাদেশ ও কানাডা উভয় দেশে তদন্তে সক্রিয় সহায়তা করা, ও অন্যদিকে পদ্মা সেতুর জন্য ঋণের সিদ্ধান্ত পুণর্বিবেচনা করা। এই প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানের সুবাদে, ব্যাংক এমন ভূমিকা রাখতে পারে যেন প্রকল্প বাস্তবায়নে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়। 

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “বিশ্বব্যাংক বা সরকার কারোরই কোন অধিকার নেই কিছু মানুষের কথিত অনিয়মের কারনে সারা দেশবাসীকে শাস্তি প্রদান করা।

বিবৃতিতে বলা হয়, “বিকল্প সূত্র থেকে অর্থায়নের উদ্যোগ দুর্নীতির অভিযোগ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নেবার প্রয়াস হতে পারে, কিন্তু সরকার পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে যে অগ্নি-পরীক্ষার মুখোমুখি তার যথার্থ উত্তরণের জন্য সরকারকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে দুর্নীতি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ সদিচ্ছা রয়েছে।

Media Contact


Press Release