হাওরে বাঁধ নির্মাণ: সুনামগঞ্জ পাউবো’র স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সমস্যা ও উত্তরণের উপায় (সার-সংক্ষেপ)

প্রকাশকাল: ২২ ডিসেম্বর ২০০৯

নদীমাতৃক বাংলাদেশের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ জুড়ে রয়েছে হাওর-জলাভূমি। সিলেট, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া- এই সাতটি জেলায় ৪৮টি বড় হাওরসহ মোট ৪২৭টি হাওরভূমি বাংলাদেশের জাতীয় উন্নয়নের অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্ষাকালে এই হাওর ও জলাভূমিগুলো প্রায় ২৪ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা নিয়ে বিস্তৃৃত হয়ে পড়ে। হাওরের ভূ-তাত্তি¡ক গঠন, জলবায়ু ও ভূ-প্রাকৃতিক কারণে বেশিরভাগ জমিই এক-ফসলি এবং হাওর এলাকার প্রায় ৬৭ শতাংশ জনগণ সরাসরি কৃষির উপর নির্ভরশীল। কিন্তু প্রতি বছরে অকাল বন্যা ও পাহাড়ি ঢল এ অঞ্চলে ব্যাপক ফসলহানি ঘটে। হাওরের ফসল রক্ষার্থে পূর্বে স্থানীয় জনগণ সম্মিলিতভাবে বাঁধের ব্যবস্থা করত। স্বাধীনতার পরে বাংলাদেশ সরকারের ‘পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়’- এর উদ্যোগে বাঁধ নির্মাণ কার্যক্রম চলে আসছে। প্রতিবছর কয়েক কোটি টাকা খরচ করে সরকারি উদ্যোগে হাওর এলাকাগুলোতে ডুবো বাঁধ  (সাবমারজিবল এ্যামব্যাঙ্কমেন্ট) নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধ দেওয়ার  প্রধান উদ্দেশ্যে হচ্ছে হাওরের ফসল রক্ষার পাশাপাশি হাওরের জীব, পরিবেশ ও প্রতিবেশকে রক্ষা করা। এ লক্ষ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সুনামগঞ্জ তার কর্ম এলাকায় ডুবো বাঁধ নির্মাণ এবং তদারকি ও রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ করে আসছে।

 

পাউবো-সুনামগঞ্জ এ পর্যন্ত সুনামগঞ্জের ৩৪টি হাওরে ১,৩৬৭ কিলোমিটার ডুবো বাঁধ, ৪.৫ কিলোমিটার ক্লোজার ড্যাম  এবং ৮৪টি স্লুইচ গেট নির্মাণ করেছে।  এর জন্য গত পাঁচ অর্থবছরে (২০০৩-০৪ থেকে ২০০৭-০৮) মোট ৫৩ কোটি ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার টাকা বরাদ্দ পায় যার বাৎসরিক গড় ১০,৬২,৯০,৪০০ টাকা। এর মধ্যে ৫১ কোটি ৮০ লক্ষ ৮৭ হাজার টাকা যার বাৎসরিক গড় ১০,৩৬,১৬,৬০০ টাকা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে ব্যয় হয়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত পাউবো-সুনামগঞ্জ চারটি পদ্ধতিতে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করেছে । এগুলো হলো, ১) কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) পদ্ধতি; ২) কাজের বিনিময়ে টাকা (কাবিটা) পদ্ধতি; ৩) ওপেন টেন্ডার পদ্ধতি; এবং ৪) প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি)  পদ্ধতি। উপরোক্ত পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বিগত কয়েক বছর টেন্ডার পদ্ধতি এবং পিআইসি পদ্ধতির মাধ্যমে বাঁধ নির্মিত হয়েছে।

 

বর্তমানে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় বাঁধ নির্মাণে পাউবো-সুনামগঞ্জ এর ভূমিকায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবের বিষয়টি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ কারণে স্থানীয় জনগণ প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতি এবং ঠিকাদারদের সাথে অবৈধ আঁতাত সম্পর্কে অভিযোগ করছে। এর ফলে অত্যন্ত দুর্বল বাঁধ তৈরি হচ্ছে বলে তারা মনে করে। এই সকল কারণে হাওরের ফসল হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে, যা হাওরবাসী মানুষের দারিদ্র্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। তবে এসব প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল শ্রেণীর জনগণকে প্রকৃত সেবা দেওয়া সম্ভব, যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি একটি সুষম সমাজ ব্যবস্থা তৈরিতে অবদান রাখবে। সেই লক্ষ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অনুপ্রেরণায় গঠিত সুনামগঞ্জ সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) ডুবো বাঁধ নির্মাণে পাউবো-সুনামগঞ্জ এর ভূমিকার ওপর একটি তথ্যানুসন্ধানমূলক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

সার-সংক্ষেপ এখানে।