সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

তড়িঘড়ি ও জোরপূর্বক একীভূতকরণ ব্যাংকিং খাতে অব্যাহত দায়মুক্তির নতুন মুখোশ; বাস্তবায়ন স্থগিতের আহ্বান টিআইবির

ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪: ব্যাংকিং খাতের দুর্বল ব্যাংকগুলো রক্ষার নামে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একীভূতকরণের পথে হাঁটতে শুরু করেছে, যা আর্থিক খাতে সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক চর্চার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিবেচিত হওয়ার কথা। কিন্তু সংবেদনশীল ও জটিল এই কাজটি করতে আর্ন্তজাতিকভাবে অনুসৃত মানদণ্ড ও রীতিনীতি এবং এমনকি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিজের ঘোষিত নীতিমালা না মেনে তড়িঘড়ি করা হচ্ছে। স্বেচ্ছাচারীভাবে চাপিয়ে দেওয়া কয়েকটি ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণা এবং এ প্রক্রিয়ায় থাকা ভালো ব্যাংকগুলোর অস্বস্তি, একীভূত হতে কোনো কোনো দূর্বল ব্যাংকের অনীহা, সব মিলিয়ে ব্যাংকিং খাতে শঙ্কা, অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তা গভীরতর করেছে। যা একীভূতকরণের পুরো প্রক্রিয়াটিকে শুরুর আগেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দিয়েছে বলে মনে করে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি মনে করে, প্রস্তাবিত একীভূতরকরণের মাধ্যমে খেলাপি ঋণে জর্জরিত দুর্বল ব্যাংকের মন্দ ঋণ ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিসংক্রান্ত বিষয়গুলোতে যে ধরনের অস্পষ্টতা তৈরি করা হয়েছে, তা সংকটের মূল সমস্যাকে পাশ কাটিয়ে ঋণ খেলাপী ও জালিয়াতির জন্য দায়ী মহলকে “দায়মুক্তি” প্রদানের নামান্তর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষিত একীভূতকরণ নীতিমালা অনুযায়ী, যে কোনো দুর্বল ব্যাংক চলতি বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত হওয়ার আগ্রহ প্রকাশপূর্বক নিজস্ব সম্পদ ও দায়-দেনা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তালিকাভুক্ত নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান দিয়ে মূল্যায়ন করে প্রকাশ করার কথা। যা বিবেচনায় নিয়ে সবল কোনো ব্যাংক দুর্বল ব্যাংকটিকে স্বেচ্ছায় একীভূত করার উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে। প্রাথমিক এই প্রক্রিয়াটি ব্যর্থ হলেই কেবল কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্তৃক জোরপূর্বক একীভূতকরণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা- মনে করিয়ে দিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, একটি দুর্বল ব্যাংক ছাড়া কোনো ব্যাংকই নিজ উদ্যোগে একীভূত হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ দেখায়নি, আবার এ প্রক্রিয়ায় নাম আসা সবল ব্যাংকগুলো স্বীয় উদ্যোগে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে এতে যুক্ত হতে সম্মত হয়েছে তাও নয়। অর্থাৎ পুরো প্রক্রিয়াটি প্রথম থেকেই স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা ঘোষিত নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তা ছাড়া, দুর্বল ব্যাংকের সম্পদ ও দায়-দেনার পূর্ণাঙ্গ মূল্যায়ন ছাড়া আপাত সবল ব্যাংকের ঘাড়ে একীভূতকরণের নামে ঋণখেলাপি ও জালিয়াতির বোঝা চাপিয়ে দেওয়া কতোটুকু যৌক্তিক ও ন্যায়সংগত? অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, যা ঘটছে তা ক্যান্সার চিকিৎসায় প্যারাসিটামল প্রয়োগের নামান্তর। একীভূতকরণের নামে একদিকে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ও জালিয়াতির জন্য যারা দায়ী তাদের যেমন সুরক্ষা দিয়ে খেলাপি ঋণের সংস্কৃতিকে গভীরতর করা হচ্ছে, অন্যদিকে সবল ব্যাংকগুলোর সাফল্যের পরিণামে খারাপ ব্যাংক হজম করিয়ে দেওয়ার জোর প্রচেষ্টা চলছে। যা অস্বস্তি ও শঙ্কার নতুন বাতাবরণ ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো খাতে।’

দুর্বল ব্যাংককে বাঁচানোর এই প্রক্রিয়া হিতে বিপরীত হবে কি-না আশঙ্কা প্রকাশ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘একীভূতকরণের আলোচনায় সরকারি-সরকারি, বেসরকারি-সরকারি এবং বেসরকারি-বেসরকারি তিন ধরনের ব্যাংকই রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কোন বিবেচনায় এই ব্যাংকগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একীভূত করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে, কিংবা কোন সবল ব্যাংকের সঙ্গে কোন দুর্বল ব্যাংক একীভূত হবে, তা কিভাবে ঠিক করা হয়েছে- তাও স্পষ্ট নয়। আবার, একীভূত হওয়ার আলোচনার বাইরে থাকা বেশ কয়েকটি ব্যাংককে তারল্য সহায়তা দিয়ে টিকিয়ে রাখা হয়ছে। অন্যদিকে, দুর্বল দুটি ব্যাংকের দায়িত্ব নিতে যাওয়া সবল বলে পরিচিত সরকারি দুটি ব্যাংকের নিজেদের খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেশ বড়। এমন বাস্তবতায় ব্যাংকিং খাতের মূল সমস্যা মোকাবিলায় কার্যকর জবাবদিহি-ভিত্তিক সুশাসন নিশ্চিত করা ছাড়া, শুধু একীভূত করলেই সংকট মোকাবিলা করা যাবে বা গ্রাহক স্বার্থ রক্ষা পাবে কিংবা খেলাপি ঋণ কমে আসবে- এমন ভাবনা সত্যিই অলীক।’

একীভূতকরণ নীতিমালায় দুর্বল ব্যাংকের পরিচালকদের পাঁচ বছর পর পুনরায় একীভূত হওয়া ব্যাংকের পর্ষদে ফেরত আসা ও ব্যবস্থাপনায় জড়িত শীর্ষ কর্মকর্তাদের পুনঃনিয়োগের সুযোগ রাখার বিধানের সমালোচনা করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘এ বিধান দুর্বল ব্যাংকের সংকটের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির বদলে পুরস্কৃত করা এবং এক ধরনের দায়মুক্তি দেবার বিধান। পাশাপাশি, দুর্বল ব্যাংকের নিরীক্ষাকালে নতুন কোনো অনিয়ম বা দুর্নীতির চিত্র উঠে এলে সে বিষয় গোপন রাখার যে বিধান নীতিমালায় রাখা হয়েছে, তা শুধু আর্থিক অনিয়মের চিত্রকেই ধামাচাপা দেবে না, একই সঙ্গে দায়ী ব্যক্তিদের জবাবদিহির মুখোমুখি করার প্রক্রিয়াও বাধাগ্রস্ত হবে। যা এক কথায় অন্যায়কে সুরক্ষা দেওয়ার শামিল। একীভূতকরণের নামে যা ঘটছে, তা হতাশাজনক এবং ঋণ খেলাপিদের হাতে ব্যাংকিং খাতের অব্যাহত জিম্মিদশার পরিচায়ক।’

নীতিমালা অনুযায়ী একীভূত দুর্বল ব্যাংকের খেলাপি ঋণ রাষ্ট্রীয় মালিকানার একটি সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি কিনে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এর ফলে জনগণের অর্থে ঋণ খেলাপিদের আরো এক দফা দায়মুক্তি দেওয়ার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ব্যাংক খাতের বিশাল ঝুকিপূর্ণ অবস্থা ও জন অস্বস্তি বিবেচনায় টিআইবি মনে করে, প্রত্যাশিত ফল পেতে সংশ্লিষ্ট খাতে সুখ্যাতিসম্পন্ন নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞগণের মতামতের ভিত্তিতে এবং আন্তর্জাতিক মানদ- ও অভিজ্ঞতার আলোকে ব্যাংক একীভূতকরণ নীতিমালায় প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থাগ্রহণ জরুরি। পাশাপাশি, ইতোমধ্যে একীভূতকরণের নামে গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহের বাস্তবায়ন স্থগিত করার আহ্বান জানাচ্ছে টিআইবি।

গণমাধ্যম যোগাযোগ:
মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম
পরিচালক, আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন
মোবাইল: ০১৭১৩-১০৭৮৬৮
ই-মেইল: tauhidul@ti-bangladesh.org

Read in English

Hasty and Forced Mergers the New Face of Continued Impunity in Banking Sector: TIB Calls for Halting Implementation


Press Release