সামাজিক মাধ্যম নিয়ে আগেও লিখেছি, আবার লিখতে হচ্ছে। আমরা একটু বেশি আবেগপ্রবণ, কারো বিপদের কথা শুনলে মাথা ঠিক থাকে না, তাকে সাহায্য করার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ি। এটা একটি পজেটিভ দিক, সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে। আমরা বাংলাদেশী, আমরা অতিথিপরায়ন, মানবিকবোধ আমাদের সদা জাগ্রত, এটা আমাদের গর্বের বিষয়।
কিন্তু বর্তমান সময়ে আমরা ইস্যু একটি হলেই ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে ব্যক্তিগত বিকাশ, রকেট, মাই ক্যাশ নম্বর দিয়ে থাকি, বিভিন্ন সময় ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাব নং শেয়ার করে সাহায্য পাঠানোর আবেদন জানাই। যেহেতু আমাদের বেশির ভাগ মানুষ পজেটিভ, তাই তারা কোন কিছু চিন্ত-ভাবনা না করেই ঐ নম্বরে সাহায্য পাঠিয়ে থাকেন। তাঁরা সাহায্য পাঠিয়ে তাদের দায়িত্ব-কর্তব্য শেষ বলে শোকর আদায় করেন। কখনও কি ভেবে দেখেছেন, যাকে বা যাদের সাহায্য করছেন, তারা কি সেই সাহায্য হাতে পেয়েছেন কি না? যারা এই ইভেন্ট খুলছেন, তাদের উপর কি সরকার নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন? কিছুদিন আগে ধর্মের লেবাসে পিয়ার নামে এক ব্যক্তির কোটিপতি হওয়ার নিউজ পড়লাম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে তিনি সাহায্য নিয়ে যাদের দেওয়ার কথা তাদের না দিয়ে নিজের আখের গুছিয়েছেন। রাষ্ট্রের কি উচিৎ না, এই সব বিষয়ে নজরদারী বাড়ানো? আপনার কি দায়িত্ব না, কোথায় সাহায্য দিচ্ছেন সেটি পরখ করা? প্রয়োজনে সরকারের সাহায্য তহবিলে জেলা প্রশাসক বা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে সাহায্য জমা দিন।
এবার আসি অন্য ধান্ধাবাজির আলোচনায়। গত দুই দিনে একটি শিশু ও একটি অসুস্থ পুরুষের ছবি অসংখ্যবার পেয়েছি ইনবক্সে, অন্য ম্যাসেজ দেখার সুযোগ নেই। এটি ফরোয়ার্ড করলে অসুস্থ লোকটি এক টাকা করে পাবে। আমি ইগনোর করে গেলেও, মুন্না ভাই বললো, শিক্ষিত মানুষ কতটা বলদ! সবাই এটা শেয়ার করছে, কিন্তু কেউ ভাবলো না, এই এক টাকা করে কে দেবে? এরপর আমি একজনকে নক করলাম, এই এক টাকা কে দেবে? সে বললো জানি না, পেলাম তাই ফরোয়ার্ড করছি। আমি কয়েক কথা পরে বললাম, এতে আপনার ব্যক্তিত্ব থাকলো কোথায়?
ধর্মীয় কিছু লিখে ফরোয়ার্ড করতে বলে, এতে নাকি খুশির সংবাদ পাবো, সওয়াব আদায় হবে। আমার বিশ্বাস, ধর্ম এত ঠুনকো বিষয় হতে পারে না, যে ফরোয়ার্ড করলেই সওয়াব আর সওয়াব। এই বিষয়গুলো যারা শেয়ার করেন, তাদের কমপক্ষে দু’টি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সনদ রয়েছে, তারপরেও কেমন করে এমন ফাঁদে পা দেন, ভাবতে কষ্ট হয়।
অনলাইনে বিভ্রান্তি যাতে আমাদের মাধ্যমে না ছড়ায়, ধর্মীয় আলোচনা বা বিষয়গুলো যেন আমাদের মাধ্যমে হালকা না হয়ে যায়, আমাদের সাহায্য নিয়ে যেন কেউ নিজের আখের না জোগাড় করে, সে দিকে আমাদের নজর দেওয়ার সময় এখন-ই। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হয়ে উঠুক আমাদের সকলের আস্থা ও ভালবাসার স্থান, মুছে যাক যত পঙ্কিলতা।