লালমনিরহাটের সদর উপজেলার মোগলহাট ইউনিয়নের কাকেয়াটেপা গ্রামের বাসিন্দা দরিদ্র আজিজুল হক মোবাইলের মাধ্যমে ভিডিও করে পরিবেশ ও ফসল বিনষ্টকারী চিত্র নিয়ে এলাকে এসে হাজির হলেন। পাশর্^বর্তী একটি মুরগীর খামারের মুরগির বিষ্ঠা, মল-মূত্র, আবর্জনা ইত্যাদি পাম্প মেশিনের দ্বারা ধুয়ে পুকুরে ফেলছে এবং সেখান থেকে ময়লা আবর্জনা মিশ্রিত পানি নালার মাধ্যমে ভুক্তুভোগীদের ফসলি জমিতে প্রবাহিত হয়ে ফসল ও পরিবেশের ক্ষতি করছে। এহেন ক্ষতি প্রায় দশ বছর ধরে চলতে থাকলেও কেহই কোন সহযোগিতা করেননি বলে অভিযোগ করেন। ভুক্তভোগী দরিদ্র জনগন স্থানীয় মাতব্বর/দেওয়ানী, থানা-পুলিশসহ ইউএনও, ডিসি মহোদয়ের নিকট গিয়ে অভিযোগ জানিয়েও কোন সুষ্ঠু সমাধান সম্ভব হয়নি। তবে সর্বশেষে ০৬ নভেম্বর ২০১৬ উক্ত কৃষকগণ টিআইবি’র ‘এলাক’ এ আসেন এবং তাদের এই সমস্যা সমাধানের রাস্তা খুজতে থাকেন।
২০১০ সালের পরিবেশ আদালত আইন নামে সম্পূর্ণ নতুন একটি আইন প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু, পরিবেশ আদালত আইনে জনগণকে সরাসরি মামলা দায়েরের অধিকার দেয়া হয়নি। বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ অনুসারে ক্ষতিগ্রস্থ যে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, জনগণ কর্তৃক সরাসরি পরিবেশ আদালতে ক্ষতিপূরণের মামলা দায়ের করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু পরিবেশ আদালত আইন, ২০১০ এ বলা হয়েছে, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শকের লিখিত রিপোর্ট ছাড়া কোনো পরিবেশ আদালত বা স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত কোনো ক্ষতিপূরণের দাবি বা কোনো অপরাধ বিচারের জন্য গ্রহণ করবে না।
বিষয়টি যেহেতু পরিবেশ, কৃষি ও জনস্বাস্থ্য-নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট অতএব ভুক্তভোগীদেরকে স্ব স্ব বিভাগের কর্মকর্তাদের বরাবর এবং পাশাপাশি পুনরায় ইউএনও বরাবরও লিখিত অভিযোগ দিতে পরামর্শ প্রদান করা হয়।
পরামর্শ অনুযায়ী ভুক্তভোগীগণ পুনরায় ইউএনও বরাবর এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগে লিখিত অভিযোগ প্রদান করেন। এদিকে ‘এলাক’ এর পক্ষ থেকে উক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগ অনুযায়ী এর অগ্রগতি পর্যলোচনা করা অব্যাহত রাখা হয়। তবে এর পূর্বে টিআইবি’র নিয়মিত একটি মিটিং এ ‘এলাক’ এর পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের সাথে এ বিষয়ে আলোচনা করলে তিনি জানান, এ অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছু করার নেই আর যেহেতু এখন এই অভিযোগটি ইউএনও মহোদয়ের কাছে আছে যা ব্যবস্থা নেয়ার তিনি নিবেন। পরবর্তীতে ‘এলাক’ এর পক্ষ থেকে সদর উপজেলার ইউএনও মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান এটি তদন্তাধীন আছে, প্রানী সম্পদ অফিসারের নিকট তদন্তভার দিয়েছি। উল্লেখ্য যে, এর আগেও পূর্বের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রানী সম্পদ অফিসার খামার দ্বারা ক্ষতির বিষয়ে তদন্ত রিপোর্ট জমা দিলেও কোন ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়নি অজ্ঞাত কারনে। নামধারী কয়েকজন সাংবাদিক নিউজ প্রচারের আশ^াস দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কাছ থেকে ঘুষ নিয়েও কোন নিউজ প্রচার করেনি অজ্ঞাত কারনে, প্রাপ্ত তথ্য প্রমানে যাদের মধ্যে “সময় টিভি”র জেলা প্রতিনিধিও রয়েছে। তাছাড়া অভিযোগকারীগণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করে অভিযোগের প্রেক্ষিতে পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়েও কখনো সঠিক উত্তর না পাওয়ায় তারা ‘এলাক’ এর সাথেই নিয়মিত যোগযোগ রেখে সমাধানের প্রত্যাশা করেন।
সর্বশেষে ‘এলাক’ এর পক্ষ থেকে পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অফিসের সাথে যোগাযোগ করলে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে অভিযুক্ত খামার মালিককে নোটিশ প্রদান করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে অভিযোগের বিষয়ে তার মতামত জানাতে বলা হয়। ‘এলাক’ থেকে যোগাযোগ করা হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকেও সরেজমিনে তদন্ত করা হয়। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা প্রমানীত হলেও এর পর কেটে যায় তিন মাস। কোন ধরনের সমাধানই করতে পারেননি কোন কর্তৃপক্ষ। এরই মাঝে বেশ কয়েকবার পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অফিসের সাথে যোগাযোগের প্রেক্ষিতে ২৯মার্চ ২০১৭ তারিখে অভিযুক্ত খামার মালিককে ২য় বার নোটিশ প্রদান করে ৭ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিতভাবে কারন দর্শাতে বলা হয় যে, কেন তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অফিসের ২য় নোটিশ পাওয়ার পরই মূলত অভিযুক্ত খামারের মালিকের টনক নড়ে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যাবহারের দম্ভ চ‚র্ণ হয়ে যায়। খামার থেকে সব মুরগি স্থানান্তর করে পাশর্^বর্তী বাজারে নিয়ে যায়, খামার ভেঙ্গে ফেলে এবং দুর্গন্ধ-ময়লাযুক্ত পুকুরটি ভরাট করার জন্য মাটি ফেলতে শুরু করে।