প্রথমে ফেসবুকে ভাইরাল বিষয়টি নিয়ে লিখতেই হয়।
ইনজামাম, আমাদের ছোট ভাই। অনেক সময় কারো রক্তের প্রয়োজন হলে, ওকে ফোন দিয়েছি, ও রক্ত দান করেছে। সম্প্রতি সে রক্তদানের জন্য বাগেরহাট ডক্টরস্ ক্লিনিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর রক্ত দিতে পারবে বলে জানায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। শেষে রক্ত না লাগায় রাতে বাসায় ফিরে যায়। পরবর্তীতে ক্লিনিক থেকে ফোনে জানানো হয়, তার এইচআইভি পজেটিভ। ইনজাম আর পলাশ ভাই রিপোর্ট আনতে গেলে নানা টালবাহানা এবং স্বীকার করে এটা তাঁদের ভুল। এবং এই ক্লিনিকের মালিক গোপনে আঁতাত করতে চাইলেও ইনজাম ও পলাশ ভাই মেনে নেন নি বলেই ডাক্তার দম্ভের সংগে বলেন, যান, যা পারেন করেন। এই হলো সার-সংক্ষেপ।
পরে প্রশাসনের নির্দেশে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহরিয়ার মুক্তার। তিনি সাংবাদিকদের জানান, ল্যাব টেকনিশিয়ানদের কোন প্রাতিষ্ঠানিক বৈধ কাগজপত্র নেই। ক্লিনিকটিকে পঞ্চাশ হাজার টাকা জরিমানা করেন তিনি। অনেকের মন্তব্য এ টাকা ক্লিনিকের মালিকের জন্য খুবই সামান্য, কিন্তু তাদের বলবো ক্লিনিকের সুনাম কতটা নষ্ট হলো, সেটি বিবেচনা করুন, পাশাপাশি সকলকে এই ক্লিনিকের ব্যাপারে সতর্ক করুন।
কিছুদিন আগে ডাক্তার ও নার্সদের অবহেলার কারণে এক প্রসূতি মায়ের সিজারের সময় মৃত্যু হয় বলে অভিযোগ ওঠে এই ক্লিনিকের নামে।
সম্প্রতি আমি আমার এক আত্মীয়কে দেখতে দুই বার ঐ ক্লিনিকে যাই। পরিবেশ ক্লিনিকের মতো বলে আমার মনে হয় নি। স্ত্রী দিলো আর এক তথ্য, তা হলো - এক নারীর সিজারের সময় নবজাতকের মাথায় ব্লেডের আঘাত লেগেছে, যদিও নবজাতকটি এখনও সুস্থ আছে।
সামান্য দুটি বাস্তব উদারহন দিলাম। এমন অনেক ঘটনা ঘটে, গোপনে হয় তো আঁতাতও হয়। সবাই ইনজাম আর পলাশ না যে, ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে। এই বাগেরহাট শহরে অনেক মানুষের বাস। অনেকের অনেক অনেক সমস্যা, কিন্তু সাহস নিয়ে কয়জন মুখ খুলছেন? ভয়! কিসের ভয়? এদের মুখোশ উন্মোচিত না হলে, পুরো শহর থেকে জেলা এক সময় অসুস্থ হয়ে যাবে। আসুন, এক বার ঘাড়টি ব্যাঁকা করে বলি, এ সব অন্যায় আমি মানি না। মাথা নোয়ানোর দিন শেষ।
বাগেরহাটের বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনেষ্টিক সেন্টার নিয়ে আমার কিছু প্রস্তাবনা রয়েছে-
১) সিভিল সার্জনের প্রতিনিধি, একজন প্রশাসনিক ব্যক্তি, সাংবাদিকসহ নিয়মিত পরিদর্শনের ব্যবস্থা করা হোক।
২) অনেক বেশি না, কম হারে জরিমানা করা হোক বিচ্যুতি অনুযায়ী। বেশি জরিমানা করলে তারা আরো বেপরোয়াভাবে মুনাফার দিকে ঝুঁকবে। জরিমানা কম হলেও নজরদারী নিয়মিত হোক, পাশাপাশি মিডিয়া বস্তু নিষ্ঠ সংবাদটুকু যথাসম্ভব গুরুত্বের সাথে তুলে ধরুক - যাতে করে সাধারণ মানুষ সতর্ক হতে পারে।
৩) প্রতিটি ক্লিনিক ও ডায়াগনেষ্টিক সেন্টারের টেকনিশিয়ান, স্টাফ ও ডাক্তাদের সনদের ফটোকপি স্বাস্থ্য প্রশাসনের কাছে জমা দিতে বাধ্য করা হোক এবং তা যাচাই বাছাইপূর্বক স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ একটি তালিকা প্রকাশ করুক যে, কোন ব্যক্তি কোন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতিষ্ঠানও তার কর্মীদের তথ্য সম্বলিত বোর্ড দৃশ্যমান স্থানে টানিয়ে রাখুক।
৪) নতুন কেউ যোগ দিলে তিন/সাত দিনের মধ্য সনদের ফটোকপি জমা দিতে বাধ্য করা হোক, সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানের বোর্ডও আপডেট করা হোক।
৫) অভিজ্ঞ, আগ্রহ আছেন এমন সিভিল সোসাইটির ব্যক্তিদের নিয়ে ওয়াচ ডগ কমিটি করা হোক। তাঁদের পাশাপাশি ভ্রাম্যমান আদালত নিয়মিতভাবে গুরুত্বের সাথে এই মৌলিক চাহিদার খাতটির দুর্নীতি হ্রাস করার জন্য আদালত পরিচালনা করুক।
বাগেরহাট হয়ে উঠুক এক আদর্শ জেলার নাম। আলো আসবেই।