যাত্রাপুর ইউনিয়নের সকল নাগরিকের ব্লাড গ্রুপিং কার্যক্রমের শেষাংশে ডেটাবেজ তৈরি নিয়ে মাথায় অনেক চাপ নিয়ে যখন যাত্রাপুর বাজারে ঢুকছি এমন সময় মেজ চাচার ফোন। বাসায় আয়। বাসায় যেয়ে যা শুনলাম তা হল-
স্বরূপকাঠি থেকে কিছু লোক এসে যাত্রাপুর ব্যবসা করে। তাদের একজনের স্ত্রী বাগেরহাটের এক ব্যাংক থেকে এক লক্ষ তেইশ হাজার টাকা উত্তোলন করেছেন। তাদের এই বড় অংকের টাকা আমার মেজ চাচার কাছে গচ্ছিত রেখে প্রতিদিন যে পরিমাণ টাকা প্রয়োজন সেই পরিমাণ টাকা নিয়ে ব্যবসা করেন। এ দিন টাকা রাখতে এলে তাদের সামনে মেজ চাচা দেখেন ব্যাংকের ট্যাগ করা ৫০০ টাকার নোটের বান্ডিলের ভিতরে পাঁচটি ১০০ টাকার নোট। এখন ঘাটতি দুই হাজার টাকার কি হবে, এ জন্য আমাকে ডেকেছেন।
কি করা যায় ভেবে বাগেরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জনাব নাজিম উদ্দিন স্যারকে বিষয়টি অবগত করি। তিনি পরামর্শ দিলেন, ব্যাংকে টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য, ব্যাংক কি বলে তাই শোনার জন্য।
আজ (২২-০৩-১৭) সকালে ঐ নারীর সঙ্গে আমি ব্যাংকে যাওয়ার পূর্বে অত্যন্ত স্নেহের ছোট ভাই ইনজামামকে ফোন দিয়ে বিষয়টা জানিয়ে ব্যাংকে ঢুকলাম। সেকেন্ড অফিসারকে বিষয়টি বললাম, তিনি ক্যাশ অফিসারকে ডেকে বিষয়টি শুনলেন এবং নিজেরা আলোচনা করলেন যে, গতকাল কোন টাকা উদ্বৃত্ত ছিলো না। যা-ই হোক, আমাকে ডেকে ঘাটতি টাকা বুঝিয়ে দিতে দিতে দুই বার ক্যাশ অফিসার বললেন, ট্যাগটি খোলেন নি ভালো হয়েছে। আমি সেকেন্ড অফিসারের নিকট আসতেই দেখি তিনি ফোনে কথা বলছেন। বললেন পার্টি আমার সামনে আমি দেখছি। উনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কাউকে বিষয়টি জানিয়েছেন। বললাম হ্যাঁ।
- কাকে?
- আমার এক ছোট ভাইকে বলেছি।
- কি করেন তিনি?
- সাংবাদিক। কেন?
- একজন সাংবাদিক ফোন করছিলো তো তাই। এটা তো ভুল, ভুল তো হতেই পারে। বিষয়টি কারো সাথে আর শেয়ার করেন না। আপনার ঝামেলা তো মিটে গেল।
ব্যাংক থেকে বের হয়ে ভাবছি, আসলে কি সমস্যার সমাধান হয়েছে? কিছু প্রশ্ন মাথায় আসছে -
১) যে ঐ বান্ডিল করলো সে কি দেখে নি যে, ৫০০ টাকার নোটের মধ্যে ১০০ টাকার নোট ঢুকছে?
২) ৫০০ টাকার নোট আর ১০০ টাকার নোটের সাইজ তো এক নয়। নিশ্চয় এমন সূক্ষভাবে নোট ভিতরে সাজানো হয়েছিলো যে, মেশিনে গুনলে ১০০টি নোট আছে, এমন দেখা যাবে। তাহলে কি এটা ভুল?
৩) যদি ভুলবশত ট্যাগ খুলে ফেলা হতো, তাহলে ঐ ২,০০০ টাকার দায় কে নেবে? ব্যাংক নাকি গ্রাহক?
৪) আমি কেন বিষয়টি শেয়ার করবো না? ব্লগারের কাজ তো সমস্যা নিয়ে কথা বলা।
৫) যারা স্বল্প শিক্ষিত, ভীত প্রকৃতির, ভাবেন শিক্ষিত মানুষের সাথে বেশি কথা বলা বেয়াদবি - তাদের জন্য কি একই সমাধান হতো?
৬) আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা কতটা নিরাপদ? যেখানে এটিএম বুথ থেকে জাল নোট বের হয়।
প্রশ্নগুলোর উত্তর পেলে হয়তো ব্যাংক নিয়ে জ্ঞানের পরিধিটা বাড়তো এবং এটা বুঝতে সক্ষম হতাম যে- এটা ভুল ছিলো নাকি সূক্ষ কারসাজি। কিন্তু প্রশ্নগুলোর উত্তরগুলো কে দেবে?