লেখার শুরুতে কিছু নিজেস্ব অপ্রাসঙ্গিক চিন্তা তুলে ধরতে-ই হয়। অনেক দিন ধরে ভাবছি এই চিন্তাগুলো সবাইকে জানাবো। এটা আব্বুকে নিয়ে, পরে আমার দাদুকে নিয়ে একটি চিন্তা কোন এক লেখায় জানাবো।
মাঝে মাঝে চিন্তা করি আমার আব্বু কেন রাজনীতি করলেন না! শুনেছিলাম কোন এক রাজনৈতিক দলের জেলা পর্যায়ের নেতা আব্বুকে অফার করেছিলেন রাজনীতি করার জন্য, তিনি করেন নি। তিনি রাজনীতি নয়, শ্রমের নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন।
কিন্তু আমি এ ভুল করতে চাই না, কেননা এখনকার সময়ে দেখছি কবিরাজের ছেলে কবিরাজের মৃত্যুর পর কবিরাজী শুরু করছে। পীর সাহেবের ছেলে পীর সাহেব হচ্ছে। রাজনীতিবিদের ছেলে নেতা হচ্ছে। সবখানে পরিবারতন্ত্র। যোগ্যতার চেয়ে পারিবারিক পরিচয় এ দেশে মূখ্য। তাই সিদ্ধান্ত নিচ্ছি রাজনীতিতে সক্রিয় হবো। আমি যদি উপজেলা পর্যায়ের নেতা হতে পারি, ছেলে টেনেটুনে জেলায় পৌঁছাতে পারবে, আর নাতি-নাতনী সংসদে। আমাদের পরিবারতন্ত্র শুরু হবে নাতি-নাতনীর হাত ধরে। সময় এখন সক্রিয় হওয়ার।
আত্ন সমালোচনা করলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে, আমার আব্বু কোন অনুষ্ঠানে আতর লাগাতেন কিনা আমি দেখিনি, অসুখ হলে বড় জোর সরকারি হাসপাতালে দেখাতেন। আমি বের হওয়ার সময় দু’টি পারফিউম ব্যবহার করি, অসুখ হলেই প্রাইভেট ডাক্তার। তার আকাঙ্খা ছিলো ছেলেটি মানুষ করা। আমার ইচ্ছা যদি ছেলে হয়, ছেলেকে টাকা আয়ের মেশিন বানানো, বৈধ-অবৈধ বুঝি না। ছেলেকে হাত-পা দেখলে সবাই মোটামুটি মানুষ বলে ধরে নেবে।
দুই প্রজন্মের মধ্যে কি দারুণ অমিল। সত্যি! এমন অমিল থাকবে কবিরাজ আর কবিরাজের ছেলের, নেতা আর নেতার ছেলের। নেতা দেশকে ভালবেসে এক কাপড় পরে কাটাতে পারেন, কিন্তু তাঁর ছেলে সবাইকে এক কাপড়ে রেখে নিজে এসিতে থাকলে অস্বাভাবিক কিছু নয়। সবাই এমন হবে সেটা বলছি না, সাধারণত এমন হয়। তাই রাজনীতির মূল্যায়নে পরিবার না, যোগ্যতা ও দেশপ্রেম দেখা দরকার।
এবার আসি ভূইফোঁড় অংঙ্গ সংগঠনের কথায়। প্রভাবশালী নেতা, তিনি দলের কোথাও কোন পদ পান নি। রাগে-ক্ষোভে একাকার। বুদ্ধি এঁটে হাবিজাবি এক নামের সাথে দলের হাই কমান্ডের কোন এক নাম জুড়ে, হাইব্রিড অঙ্গ সংগঠন গঠন করছেন। অন্য পদ প্রাপ্ত নেতারাও ভয়ে কিছু বলেন না। হতে পারে পদ হারানোর ভয় কিংবা অন্য কোন গোপন ভয়। এই ভূঁইফোড় গ্রুপ-ই দলের নাম ডুবায় কিন্তু হাই কমান্ডও অসহায়।
অযোগ্য লোকদের নেতৃত্বের আসনে বসিয়ে প্রতিটি রাজনৈতিক দল-ই ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছে কিংবা করবে। তাদের স্বার্থে আঘাত পড়লেই আন্দোলন, স্বার্থ ঠিক থাকলে সব ঠিক। জন কল্যান বা দেশের উন্নয়ন নিয়ে তৃণমূল থেকে শুরু করে হাই-কমান্ড পর্যন্ত ৩০% নেতা চিন্তা করলে এদেশ ভূ-স্বর্গে পরিণত হবে।
এ দেশ অনেক সম্ভাবনার। এ দেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে তিন বছরও সময় লাগে না, আমার উন্নয়নের নামে ঋণ বা ভিক্ষাও আনতে হবে না - যদি আমাদের নেতাদের ৩০%, আমলাদের ৫০%, প্রসাশন ১০০% দেশের স্বার্থে কাজ করেন। আমরা আমেরিকার কয়েক হাজার লোককে চাকরি দিতে পারি, অন্যান্য রাষ্ট্রে সাহায্য পাঠাতে পারি, সামরিক শক্তি বৃদ্ধিতে আরো বাজেট রাখতে পারি, প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারি পুরো জাতিকে।
দেশটার প্রয়োজন শুধু ভালবাসার, প্রয়োজন শুধু যোগ্যতার মূল্যায়ন, জনকল্যাণমুখী রাজনীতি, হীন স্বার্থের উর্দ্ধে জনস্বার্থ। পুরো বিশ্বকে আলোকিত করবো আমরা। আমরা-ই বাংলাদেশ।