আমার সাধারণত যে জেলা শহরে বেশি যাতায়াত তা আমার নিজের এবং প্রিয় জেলা বাগেরহাট। এই শহরে ট্রাফিক জ্যাম বলে কিছু আছে বলে মনে হয় না। তারপরও দেখি পুলিশ সুপার বের হওয়ার সময় ট্রাফিকের সে কি দায়িত্ব পালন। রিক্সাওয়ালাকে ধমক, অটো ড্রাইভারের গাড়ির পিছনে লাঠির আঘাত ইত্যাদি। তিনি চলে গেলেন তো, দায়িত্ব শেষ।
দারুণ ব্যাক পেইন, বাগেরহাট-খুলনা-ঢাকার বিভিন্ন ডাক্তারের বিভিন্ন মতামতের প্রতি সম্মান রক্ষা না করতে পেরে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাবো বলে মন স্থির করে, ভারতীয় এম্বাসির খুলনা শাখায় আবেদন জমার দেওয়ার উদ্দেশ্যে খুলনা গিয়েছিলাম সাথে ছিলো তুষার। অটো গাড়ি সোজা না গিয়ে অনেক ঘুরে যেতেই বললাম, কি রে ভাই, রাস্তা চেনো তো? উত্তরে বললো, চিনি কিন্তু এখন কমিশনার বাইর হবে, ঐ রাস্তা দিয়ে যাওয়া যাবে না। আপনি কন ভাই, খুলনায় কি জ্যাম হয়? কমিশনারের সময়ের দাম আছে, পাবলিকের নাই? জিজ্ঞাসা করলাম, কোন কমিশনার? জবাবে বললো, ঐ পুলিশ কমিশনার না কি আছে না!
শুধু এই না, ঢাকা শহরে অমুক নেতা যাবে রাস্তা বন্ধ। তমুক মন্ত্রী যাবে রাস্তা বন্ধ। এই দলের সম্মেলন রাস্তা বন্ধ, সেই দলের বিক্ষোভ রাস্তা বন্ধ। যত ভোগান্তি সাধারণ জনগণের।
সংবিধানানুযায়ী, রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। তারা রাষ্ট্র পরিচালনায় সকলে অংশ নিতে পারছে না বলেই প্রতিনিধি পাঠায় সংসদে। সেই প্রতিনিধি মন্ত্রী হয়ে যদি জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে তবে জনগণ যাবে কোথায়? রাষ্ট্রের জনগণ যদি রাষ্ট্রের মালিক হয় তবে আমলারা ভৃত্য নিশ্চিত। সেই ভৃত্য যদি প্রতি নিয়ত জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করেন তবে বিষয়টা চিন্তায় ফেলে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের অধিকার আদায়ের কথা বলার জন্য সভা করে বলে জাহির করেন। আমার ভালোর জন্য আমার দুর্ভোগ সৃষ্টি করার অধিকার আমিতো কাউকে দেই নি।
আসলে জনগণ কিছু না, সব আইওয়াশ। আসল ব্যাপারটা হচ্ছে ব্যক্তিক উন্নয়ন, কার দুর্ভোগ কে দেখে?
এরপর আসি যারা রাস্তার দায়িত্বে থাকেন তাদের কথায়। তারা ভিআইপিদের নিয়ে ব্যস্ত, আমাদের কথা কেউ ভাবে নি। আমি নিজ চোখে দেখেছি, ভিক্ষুকের মতো এক সার্জেন্ট নিষিদ্ধ নসিমন চালকের ফেলে যাওয়া দু’টি পাঁচ টাকার নোট কুড়াচ্ছে। কলা ভর্তি অটো ড্রাইভারের কাছ থেকে বিশ টাকা নিয়ে দায়িত্ব পালন করছেন। আবার, অনলাইন কিছু নির্ভরযোগ্য সংবাদে পড়লাম, একজন সিএনজি ড্রাইভার এ্যাটেম টু মার্ডার এর মতো জঘন্য অপরাধ করার পর পাবলিক ধরে ট্রাফিকের কাছে দিলো, সেখান থেকে সে লাপাত্তা। এই দায়িত্ব কে নেবে? যে যুবককে মারা চেষ্টা করা হয়েছিলো সে প্রবাসী, সে একবার আমেরিকা গেলে মনের ভুলেও বাংলাদেশে আসবে না, এমনকি বাবার কবর দেখতেও না।
আমি মানুষ, আমি এদেশের নাগরিক, আমার সময়ের মূল্য কোথায়, আমার জান-মালের নিরাপত্তা কোথায়? কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই, তেমনি আমরা দেশের মালিক সংবিধানে আছে, বাস্তবিক প্রয়োগ কোথায়?