টিআইবি আয়োজিত ২০১৭ সালের আলোকচিত্র প্রতিযোগীতায় শিক্ষার একটি বিষয় তুলে ধরেছিলাম, যদিও সেই আলোকচিত্রটি মনোনয়ন পায় নি, তারপরও ভাবলাম বিষয়টি নিয়ে একটি ব্লগ লেখা জরুরি। কেননা, বছরের শুরুতেই শিক্ষাখাতে এই নিরব দুর্নীতিটি ঘটে, যা আসলে আমরা অনেক ক্ষেত্রে বুঝতেও পারি না।
বছরের প্রথমে শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ পরিকল্পনা অর্থাৎ সিলেবাস তুলে দেওয়া হয়। শিক্ষক সমিতি থেকে প্রদত্ত যে সিলেবাস, তাতে বাংলা এবং ইংরেজি রচনা/অনুচ্ছেদ/সারাংশ ইত্যাদির নাম না দিয়ে একটি নির্দিষ্ট বইয়ের নম্বর ও পৃষ্ঠা নম্বর দেওয়া হয়। এতে করে শিক্ষার্থীরা ঐ বই বাজার থেকে কিনতে বাধ্য হয়, এমন কি শ্রেণি কক্ষেও নির্দিষ্ট বই কেনার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয়। যে কোম্পানি শিক্ষক সমিতিকে মোটা অংকের ডোনেট করে, তাদের বই চালানোর জন্য সমিতিভূক্ত বিদ্যালয়গুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয় । বইয়ের মান যাচাই করে বলে জানা নেই। শিক্ষক সমিতি যে বই সিলেক্ট করে সেই বই-ই বিদ্যালয়গুলো পড়াতে বাধ্য হয়। বইয়ের মান যাচাই না করায় কিছু কিছু শিক্ষকের এর বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকলেও রোষানলে পড়ার ভয়ে চুপ থাকে। সরকার প্রথম থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত সকল বই ফ্রী দেওয়ার ব্যবস্থা করলেও একটি অসাধু মহল শিক্ষক সমিতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তারা নীরবে এমন দুর্নীতি করলেও দেখার বা জবাবদিহিতা করার মতো কেউ নেই। তাছাড়া দরিদ্র শিক্ষার্থীরা যে পুরাতন বই সংগ্রহ করে পড়বে তারও সুযোগ খুবই কম।
শুধু তাই নয়, গাইড বই রয়েছে ভিন্ন নামে। কোম্পানির প্রতিনিধিরা শিক্ষকদের সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ ও সুবিধা প্রদানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কোম্পানির গাইড ক্রয় করতে উদ্বুদ্ধ করে। অন্যদিকে মফস্বল বা গ্রামের বিদ্যালয়গুলোর পরিচালনা কমিটির বেশির ভাগ সদস্য-ই রাজনৈতিক পরিচয়ে কমিটিতে ঢোকে। আমার দেখা আছে, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন। এখন তিনি গাইডের কুফল সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রাখেন বা আধুনিক শিক্ষার ব্যাপারে কতটুকু খোঁজ রাখেন তা আমার জানা নেই। কেননা, তাকে প্রতিনিয়ত রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ত থাকতে দেখি।
তাছাড়া আমাদের প্রশাসনের দায়িত্বে অবহেলা, শ্রেণি কক্ষে যথাযথ পাঠদান না করিয়ে কোচিং বা টিউশনির ব্যবস্থা করা, আইন প্রণয়নে দুর্বলতা ইত্যাদি বিষয়গুলোর কারণে অসাধু মহল দিনকে দিন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থাকে শিক্ষা ব্যবসায় পরিণত করে চলেছে। এই অবস্থার আশু পরিবর্তন প্রয়োজন।