কথা ছিলো ঢাকা থেকে ফিরেই একটি ব্লগ লিখবো, কিন্তু শরীর সেই কথা রাখতে দিলো না, তাই তো একটু দেরি হলো। ৯ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষ্যে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে আয়োজন করে মানববন্ধনের। আমরা যারা দেশের বিভিন্ন জেলা বা উপজেলাতে দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত তাদের থাকার ব্যাপারটা আগে জানতাম না। শুধু জানতাম, অনুপ্রেরণামূলক পুরষ্কার দেওয়া হবে এবং তা যার যার সনাক অফিস থেকে। কিন্তু যখন জানলাম যে ঢাকাতে দেওয়া হবে মনের মধ্যে একটি ভালো লাগা বয়ে গেল, কেননা এক ঝাঁক সদা হাস্যোজ্জ্বল তরুণ মুখের সাথে আবার দেখা হবে আর এই দেখাই হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ দেখা। বয়সের কারণে ইয়েস হিসাবে আর দেখা হচ্ছে না, তাই বলে আন্দোলন থেকে সরে যাচ্ছি না, বরং স্বচ্ছতার জন্য নাগরিক (স্বজন) সদস্য হিসাবে আন্দোলন চালিয়ে যাবো।
আরো বেশি ভালো লাগলো যখন জানলাম যে আমরা দুর্নীতিবিরোধী একটি মানববন্ধন করবো কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে। সাড়ে দশটায় মানববন্ধনের জন্য সময় নির্ধারণ করা থাকলেও উপস্থিত হয়েছিলাম নয়টার কিছু পরে। দেখলাম জাহিদ ভাই সহ ঢাকা অফিসের অনেকে উপস্থিত। সময় বাড়ার সাথে সাথে বাড়তে শুরু করলো পরিচিত-অপরিচিত অনেক তরুণ মুখ। একটি উৎসব মুখর পরিবেশের সৃষ্টি হলো। সকলের সাথে কুশলাদি বিনময় চলতেই থাকলো, পাশাপাশি ছবি তোলার ঝড়। মনে মনে ভাবছিলাম যে, দুর্নীতিবাজরা যদি এমন তারুণ্যের জোয়ার দেখে তো অবশ্যই শংকিত হবে, দুর্নীতি করার আগে ভাববে। তাদের ঐ মানববন্ধনে দাওয়াত দেওয়া উচিৎ ছিলো, অন্তত দেখতে পেত তাদের জন্য তরুণদের কি ঘৃণা।
মানববন্ধন সামান্য বিলম্ব হলো সকলের উপস্থিতির জন্য, কিন্তু কারো চেহারায় বিলম্বের যে বিরক্তি তা ফুটতে দেখি নি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের বক্তব্য অনুপ্রাণিত করলো। আমার দৃষ্টিতে তরুণ ও হিরো নির্বাহী পরিচালক স্যার বললেন, “দেশ দুর্নীতি মোকাবেলায় আগের চেয়ে যথেষ্ট সক্ষম”। কিন্তু আমার কথা হলো, যতই দেশ সক্ষম হচ্ছে দুর্নীতিবাজরা ততই কৌশলী হচ্ছে, তাছাড়া নীতি-নৈতিকতা হীন রাজনীতির গ্যাড়াকলে পড়ে দেশ এবং নীতিবানেরা খেই হারাচ্ছে। এর জন্য সামাজিক আন্দোলন আরো বেশি গতিশীল করা প্রয়োজন, যা এখন সময়ের দাবীও বটে। তারুণ্যের যে জোয়ার তাতে একটু হাওয়া দিলেই দুর্নীতিবাজদের মহলে সুনামী বইয়ে দিতে সময় লাগবে না।
মানববন্ধন শেষে আমরা শিশু একাডেমীতে পায়ে হেঁটে গেলাম অনুপ্রেরণামূলক পুরষ্কারের জন্য। বাংলাদেশের বরেণ্য কথা সাহিত্যিক সেলিনা হোসেন ছিলেন মূখ্য আলোচক, তাঁর আলোচনা মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনলাম। শুনলাম প্রিয় ব্যক্তিত্ব এ্যাড. সুলতানা কামাল ম্যাডামের কথা। খুব কাছ থেকে তাঁর কথা শোনার এবং তাকে শোনাবার সুযোগ পেয়েছি আমি। তাই তো তাঁর কথা শুনলেই মনে হয়, আপন কারো উপদেশ শুনছি, সে আমার আত্নার পরম আত্নীয় এবং অভিবাবকও বটে। অনুষ্ঠান শেষে ব্লগ এডমিন মোর্তুজা আশীষ ভাইয়ের সাথে পরিচয়। এই ব্লগ লেখাতেই তার সাথে পরিচয় হলো, জেনে আমার ভিতর একটি অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করছিলো।
বিকেলে দৃক গ্যালারিতে আবারো দেখা হলো সুলতানা কামাল ম্যাডাম, নির্বাহী পরিচালক স্যারের সাথে। গত বছর আলোকচিত্র প্রতিযোগীতায় পুরষ্কার পেলেও এবার ছোট ভাই মিজানকে সঙ্গ দিতে যাওয়া, ওর চিত্রটি চমৎকার লেগেছে আমার কাছে। সেখানেও সকল ক্ষেত্রে তরুণরা এগিয়ে, তা হোক কার্টুন বা আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা।
তারুণ্যের জয় সারা পৃথিবীময়, যেখানে তারুণ্য সেখানে জয়। সুতরাং তরুণরা যখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক হয়েছে জয় আসবেই।
আলোর মশাল হাতে হেঁটে যাবো এক সাথে, ভয় কি বন্ধু বিশ্বাস রেখ বুকে।