সমস্যা হিসাবে দুর্নীতি কতটা প্রকট তা বোঝাবার জন্য বিভিন্ন গবেষণা করা হচ্ছে।সেই সমস্ত গবেষণায় থাকছে বিভিন্ন ধরেণের তথ্য উপাত্ত। থাকছে কিভাবে কিভাবে দুর্নীতি হয়, কারা সেই দুর্নীতি বেশি করছে প্রভৃতি বিষয়। খাত হিসাবে কোন সেবা খাতে বেশি দুর্নীতি হচ্ছে এমন সব গবেষণার ফলাফল আমরা দেখতে পাচ্ছি।সরকারী মহলের টনক নাড়ানোর চেষ্টাও করা হচ্ছে এসবের মধ্য দিয়ে। নিঃসন্দেহে মানুষের সচেতনতাও বাড়ছে ।এর প্রভাব সমাজে কেমন তারও একটা ধারণা আমরা দাঁড় করানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু ধরে ধরে কোন সমাজে, কোন কোন মানুষের উপরে কি ধরণের প্রভাব পড়ছে তা যেমন খুঁজে বের করছি না তেমনি করাটাও দুষ্কর পর্যায়ের কাজ।
আমার বাড়ি সাতক্ষীরার একটি প্রত্যন্ত গ্রামে। বন্যার পানি উঠে না। মহাসড়ক থেকে এক কিলোমিটার দুরে আমার গ্রাম তবুও প্রত্যন্ত । কারণ গ্রামে যাওয়ার জন্য পাকা রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ পেয়েছি মাত্র কয়েক মাস হলো।যা লিখব তা এই বিদ্যুৎ সংযোগ পওয়া নিয়েই। যশোর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের যেখানে যশোর শেষ তার একটু সামনেই আমার গ্রাম।সুজলা-সুফলা বলা যায়।
বিভিন্ন মহলে ধরাধরি যোগযোগের পর আমাদের গ্রামের এক’শ পরিবার বিদ্যুৎ পেয়েছে গত রমজানের ঈদের আগের দিন। এই বিদ্যুৎ পেতে তিন লক্ষ টাকা খরচ করতে হয়েছে এই কৃষিজীবি, শ্রমজীবি মানুষগুলোকে। এর মধ্যে আবার যারা রাজনৈতিক সুনজরে আছেন তাদের অনেকের টা মওকুফ যা বহন করতে হয়েছে এই দরিদ্য মানুষগুলোকে ।যাকে বলে মরার উপরে খাঁড়ার ঘা।
অতঃপর বিদ্যুৎ সংযোগ উদ্বোধনের দিন উপজেলা চেয়ারম্যান, পল্লী বিদ্যুতের অঞ্চলিক জিএম সহ আরো অনেকেই হাজির।তারা বাহবা নিতে এসেছেন, সাথে একজন মফোস্বল সাংবাদিকও হাজির। আমি অবাক হই দুর্নীতিবাজ এই সব মানুষদের দেখ, মাঝে মাঝে মায়াও লাগে র্নিলজ্জের মত কি করে এরা সরকারের ভিশন, মিশনসহ বিভিন্ন বুলি দিয়ে দুর্নীতিও করছে আবার সম্মাননাও নিয়ে যাচ্ছে। মূর্খ, শিক্ষিত, অর্ধ শিক্ষিত মানুষগুলোকে কিছু বলার নেই। কারণ প্রতীক্ষিত বিদ্যুৎ পেয়েই তারা খুশি। কিন্তু এর প্রভাব সম্পর্কে তারা জানেইবা কি।
হাবিবুর রহমান তাঁর কিডনি রোগে অসুস্থ ১৪ বছর বয়সি ছেলেকে ঢাকা অানতে পারেনি। যাকে প্রতি মাসে একবার করে ঢাকা মেডিকেলে এনে চিকিৎসা করাতে হয়। ছোট এই বাচ্চাটির সেইবার বেশি অসুস্থ হয়ে গেল। তার কষ্ট যেমন অন্য কেউ জানে না। তেমনি এই কষ্টের পেছনের কারণ যে দুর্নীতি তাও তারা জানে না। নুরু মিয়ার মেয়েটা সাপের কামড়ে মারা গেল। বিলাপ করে তারা বলছিলো ‘এমন পোঁড়া কপাল আমার ঈদে মেয়ে জামা চেয়েছিলো দিতে পারেনি।’ আসলে দোষ কি পোঁড়া কপালের না কি যে বা যারা কপাল পোঁড়ালো তাদের? আসানুরের এক ছেলে অনার্স পড়ে। প্রতি মাসে তাকে তিন হাজারের মত টাকা দিতে হয়।ছেলেটাকে সেই মাসে ১৮ শত টাকার বেশি দিতে পারে নি। এ দোষ কার?
আবু শামা তো পুরো টাকা দিতে না পারায় মিটার পেতে আরো এক মাস দেরি করতে হয়েছে। ঠিক এমনি কত মানুষের যে ফসলের বীজ কেনা হয়নি সময় মতো, সার কিনতে পারেনি।কিনলেও ধার দেনা করে তার হিসাব নেই। কত মানুষ যে আনন্দের ঈদে ঠিক মত বাজার করতে পারেনি তাও রয়ে গেছে অজানা। এ কেবল এক’শ ঘরের একটি গ্রামের ঘটনা। অথচ এমনই ঘটনা প্রতিটি গ্রামে ভরিভরি।
মানুষ হিসাবে আমি খুব আশাবাদী।কিন্তু মাঝে মাঝে নিরুৎসাহিত হতে বাধ্য হই। কাঠ পোকার মতো করে দুর্নীতি আমাদের সমাজে ঢুকে গেছে। কারো খেয়ে ফেলছে জীবনী শক্তি কারো বা নৈতিকতা।
এর থেকে মুক্তি আর কত দেরি?
Comments
RSS feed for comments to this post