কী ছাপি আর কী চাপি...সাংবাদিকজীবনে প্রায়ই এ কথাটা শুনতাম। এর প্রয়োগের কথাও শুনতাম। ছাপা নয়, বরং চেপে যাওয়াটাই নাকি অনেক সাংবাদিকের পেশা। এ কারণে রীতিমতো মাসোহারাও আদায় করেন অনেকে। কীভাবে? ধরুন, ঘুষ নিতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়লেন কোন ব্যক্তি। সে খবর পেয়ে গেলেন সাংবাদিকও। কিন্তু সংবাদটি প্রকাশ হবে না কোথাও। কারণ এখানে ছাপা নয়, চেপে যাওয়াতেই লাভ। ঘুষের খবর চেপে যাওয়ার জন্য তার ভাগও পাবেন সাংবাদিক। নানান খবর ছেপে মাসিক বেতন তো পাচ্ছেনই, উপযুক্ত খবরটি চেপে গিয়ে বাড়তি আয়ও হচ্ছে যার পরিমাণ আবার কখনো মাসিক বেতনকেও ছাড়িয়ে যায়। ছাপা আর চাপা দুটোতেই তাই লাভ।
যে খবর জানছি, শুধু তাই নিয়েই ভাবছি। আর যা জানছি না? ‘হোয়াট ইউ ডোন্ট নো, উয়োন্ট হার্ট ইউ’ পুরনো ইংরেজি প্রবাদটির যথাযথ বাংলা সংস্করণ খুঁজে পেলাম না। তাতে ক্ষতি নেই। এর যথেষ্ট প্রয়োগ দেখা হয়ে গেছে। বড় একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাঁটাই নিয়ে কর্মীদের অসন্তোষ, আন্দোলন চলছে। বন্ধু-বান্ধব সবার মুখে শুনছি এ নিয়ে। কিন্তু কোন গণমাধ্যমে বিস্তারিত সংবাদ দেখলাম না। দুই-তিনদিন পর দায়সারা রিপোর্ট এল কোনমতে শুধু সংবাদটি জানিয়ে। কোন ব্যাখা নেই, কর্মীদের বক্তব্য নেই। আবার বিশেষ একটি গণমাধ্যম ঝাঁপিয়ে পড়ল এ নিয়ে। কেউ যেখানে সাড়াশব্দ করছে না, সেখানে তাদের এ ক্রুসেড! সন্দেবাতিক মন কুকথা বলে। ওই পত্রিকায় ওই প্রতিষ্ঠানটি বিজ্ঞাপন দেয়না- এখন তাই চেপে ধরো। যা নয়, পারলে তা-ও লিখে দাও। কেউ ছাপলো, কেউ চাপলো। কিন্তু দুটি ক্ষেত্রেই এজেন্ডা বাস্তবায়ন হল নিজেদের, সাধারণ মানুষের নয়।
তাহলে কী করতে পারি আমরা? প্রাক্তন সাংবাদিক হিসেবেই বলছি, ছাপার অক্ষরে কিছু দেখেই বিশ্বাস করে বসবেন না। ভরসা রাখুন নিজের বিবেচনাবোধের ওপর, খোলা রাখুন চোখ আর কান। খবরের পেছনের খবরটাও বুঝতে চেষ্টা করুন।
Comments
RSS feed for comments to this post