মাদক দ্রব্য নিয়ে কম দৌড়ঝাপ হয় না, তারপরও দিনকে দিন মাদকের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ব্যবহার বৃদ্ধির পিছনে যে সকল কারণ রয়েছে তার মধ্যে প্রধান কারণ যেটি চিহ্নিত করা যায় তা হলো রাজনীতি। মাদকের বিস্তারে রাজনীতির বহুবিধ প্রভাব আছে বলে আমি বিশ্বাস করি।
আমি যেহেতু মফস্বলে থাকি, সেহেতু মফস্বল রাজনীতির কথায় আসি। এখানে নেতা থেকে শুরু করে নেতার সাগরেদ, চেলা সবাই কোন না কোন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে থাকে। নেতার পিছনে ঘোরার ৭২ ঘন্টা যেতে না যেতেই হাবাগোবা ছেলেটি সিগারেটে টান দিয়ে নিজেকে নেতা প্রমাণ করাতে চায়। সিগারেটে শুরু করে হিরোইন বা ইয়াবায় গিয়ে শেষ হয়। রাজনৈতিক নেতারাও চায় তাদের অনুসারীরা নেশা করুক, কেননা সুস্থ মস্তিষ্কের কোন লোক চাকরের মতো আজ্ঞাবহ হয়ে নেতার হুকুম তামিল করবে না। শুধু তাই নয়, নেশা করলে ওদের টাকা ও শেল্টারের প্রয়োজন হবে। তখন নেতা ছাড়া ছায়া দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। এই হচ্ছে ভিলেজ পলিটিক্স ও মফস্বল রাজনীতির বাস্তব চিত্র। আগের দিনে যখন রাজতন্ত্র ছিলো বা জমিদার প্রথা ছিল তখন রাজা বা জমিদারের ছেলে যা ইচ্ছা করতো এবং ঔটা ছিলো ওদের অধিকারের মতো । আর এখন মন্ত্রীদের পুত্র। সময় পাল্টেছে, পদবীর পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু অধিকারের পরিবর্তন হয়নি। স্বাধীন দেশে নির্বাচিত সকল সরকারের আমলে, সরকারের মুখে চুন কালী দেওয়ার জন্য একটি গ্রুপ তাদের দলেই থাকে। যদিও তাদের ব্যাপারে উপর মহল একটু উদাসীন।
এরপরে মাদক বিস্তারে অসামান্য অবদান রাখেন আমাদের দুর্নীতিতে ২০১৫ সালের রানার্স আপ বাহিনী। রাজনীতি ও ঘুষের কাছে তারা জিম্মি। টুকটাক হোক আর বড় আকারের হোক, নেতাদের ফোন আর পকেট গরমের কারণে দোষীদের ছাড়তে হয়। এর মানে এই নয় যে, সবক্ষেত্রে দোষীদের ছাড়া হচ্ছে বা মাদক জব্দ করা হচ্ছে না। হচ্ছে ঠিক কিন্তু পুরোপুরি এ্যাকশন নিলে মাদকের বিস্তার কোনভাবেই সম্ভব না। এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি ছিলো। এখন নাই, তো একদিন চেয়ারম্যানকে বললাম, ফাঁড়িটা থাকলে ভাল হতো না। তাঁর উত্তর ছিলো, অনেক ঝামেলা করে ফাঁড়ি উঠানো লাগছে। কারণ হিসাবে বলল, আমি ব্যাটা গাঁজা বেচা বন্ধ করার জন্য দৌড়োদৌড়ি করি, আর যারা গাঁজা বিক্রি করে তাদের কাছ থেকে প্রতি মাসে ঘুষ নিয়ে ব্যবসায় সাহায্য করে। এতেই বুঝা যায়, পুলিশের ভূমিকা কেমন।
২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস। আসুন, শিশু ও যুবাদের প্রতি মনোযোগ দেই, তাদের নিরাপদ বেড়ে উঠা নিশ্চিত করি। এই স্লোগান নিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর নানা কর্মসূচি পালন করেছে। একটি ভাল লক্ষণ, মানুষ সচেতন হবে, অভিবাবক সচেতন হবে। কিন্তু গাছের গোড়া কেটে আগায় পানি ঢালার মতো যেন না হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরকে আরো বেশি কার্যকর ভূমিকায় দেখতে চাই। মাদকের সঠিক নিয়ন্ত্রণ চাই। কোন অপশক্তির নিকট মাথা নত না করে, দেশের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে, তারা তাদের দৃঢ় মনোভাব বজায় রাখা ও মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণার এখনই সময়।
আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসাবে বলতে চাই, মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য যে আইন আছে তার যথাযথ প্রয়োগ করা হোক। নেশামুক্ত সোনার বাংলায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিতে চাই।