একটি মেয়ের সবচেয়ে কাছের এবং প্রিয় বন্ধু মা। বেশির ভাগ মা তার মেয়েকে যে দৃষ্টিতে দেখে, পুত্র বধূকে সে দৃষ্টিতে দেখে না। মেয়ের জামাই যদি মেয়ের কথা মতো চলে তো জামাই খুব ভাল আর ছেলে যদি পুত্র বধূর কথা মতো চলে তো বউ হচ্ছে ডাইনী - ছেলের কোন দোষ নাই। আমাদের মা এবং শাশুড়ী যতদিন শুধুমাত্র মা না হতে পারবেন, ততদিন পারিবারিক সমস্যাগুলো দূর হবে না বলে আমি বিশ্বাস করি।
নারীই নারীকে ছোট করে দেখছে, আমি বলছি না পুরুষ দেখছে না। পুরুষ অবশ্যই ছোট করে দেখছে বলে আমাদের নারীরা আজও পিছিয়ে আছে।
পারিবারিকভাবে, ছোট বেলায় ছেলেদের খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে সবক্ষেত্রে অন্যরকম দৃষ্টি দেওয়া হয়। মেয়েটির প্রতি ততটা যত্ন নেওয়া হয় না। আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই দায়িত্বটা পালন করেন একজন মা, যিনি একজন নারী। তিনিই শৈশব কাল থেকে একটি বৈষম্য সৃষ্টি করে দিচ্ছেন আর পুরুষতান্ত্রিক সমাজে ছোট্ট ছেলে শিশুটি বড় হয়ে বোনকে তার ন্যায্য অধিকার ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত করার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। এক্ষেত্রে বাবা-মায়ের দেওয়া পারিবারিক শিক্ষার ভূমিকা অনস্বীকার্য। এতো গেল পারিবারিক সমস্যা।
শ্বশুর বাড়ীতে একজন নারী যদি নির্যাতিত হয়, নির্যাতনকারী হিসাবে প্রথম ভূমিকা রাখে তার স্বামী, দ্বিতীয় শাশুড়ী, তৃতীয় ননদ। শ্বশুর বা দেবরের সংশ্লিষ্টতা কমই দেখা যায় পত্রিকার পাতায়। কখনও কখনও পুত্রবধূ নির্যাতনে শাশুড়ীর ভূমিকাই মুখ্য হয়ে থাকে।
পত্রিকায় দেখেছিলাম, যশোর একজন এমপি'র পুত্রবধূকে হত্যা করা হয়, যিনি ছিলেন একজন ডাক্তার। এখানে তার শিক্ষিত শাশুড়ীকে মুখ্য ভূমিকা দেখা যায়। শিক্ষিত সমাজের শাশুড়ীর এমন অবস্থা হলে গ্রাম্য সমাজের পরিস্থিতি সহজে অনুধাবন করা যায়।
তনু হত্যার ব্যাপারে কোন মন্তব্য করবো না, কিন্তু প্রথম ময়না তদন্ত করেছিলেন একজন নারী ডাক্তার। প্রথম ময়না তদন্তে ভুল ছিল, স্বীকার করা হয়েছে কিন্তু ভুল নাকি ইচ্ছাকৃত ভুল? এখানে ঐ নারী যদি তনুকে তার মেয়ে মনে করতেন, তাহলে কি এই ধরণের ভুল হতো?? হতো না! তাহলে নারী হিসাবে একজন নারীকে অবমূল্যায়ন করা হলো কিনা?
অনেক প্রোগ্রামে দেখেছি, একজন নারী বক্তব্য দিলে অন্য একজন বলছে ভাল হচ্ছে না, একজন পুরুষ বক্তব্য দিলে ভাল হতো। কিন্তু সে ঐ নারীকে উৎসাহ দিবে না।
আসলে পরিবর্তন দরকার দৃষ্টিভঙ্গির, মানসিকতার। পুরুষ তান্ত্রিক সমাজে নারী যতদিন নারীকে যথাযথ সম্মান না দিবে, ততদিন নারীর পরিপূর্ণ উন্নয়ন সম্ভব নয়।