"যখন অবিশ্বাসের রাজ্যে আছি" ব্লগে আমি এক ভদ্র লোকের কথা লিখেছিলাম যিনি খাঁটি ঘি কিনতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। সেই ভদ্র লোক ঐ দেশে ট্রেনে উঠেছিলেন কোথাও যাওয়ার উদ্দেশ্য। ট্রেনে দেখেন একজন ভদ্র লোক বসার সিটের ছেঁড়া অংশ সেলাই করছেন। তার বেশ কৌতুহল হলো, এমন ভদ্র পোষাকে রেলের কর্মচারী। সে প্রশ্ন করলেন,
-আপনি কি রেলের কর্মী?
মনোযোগী ভঙ্গিতে সেলাই কাজ করতে করতে উত্তর দিয়েছিলেন,
-না
-তবে কি রেলের কর্মকর্তা?
-না
-তবে!!
-একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা।
-তাহলে সিট সেলাই করছেন কেন?
-আমি ভ্রমণে বের হয়েছি। কাছে সুচ-সুতা আছে, তাই সেলাই করলাম।
-তাই বলে আপনি!
-এ দেশ আমার, তাই এর সম্পদও আমার দেখাশুনা করা উচিৎ।
এভাবে কথা বলতে বলতে তাদের যাত্রা শেষ হলো।
ঐ লোক দেশে ফিরে ঢাকা থেকে চট্রগ্রাম যাবেন বলে ট্রেন উঠেছিলেন। টয়লেট সেরে আয়নায় তাকাতে দেখলেন নির্দিষ্ট স্থানে আয়না নেই, তবে ইট দিয়ে কিছু একটা লেখা - যা তিনি দূর হতে পড়তে পারছিলেন না। কাছে গিয়ে লক্ষ্য করেন দেখলেন, "এ দেশ আমার, এ দেশের সম্পদ আমার, তাই আমার অংশ আমি বুঝে নিলাম।"
আমি আর আবু সালেহ ভাই তাইওয়ানে প্রথম রাত কাটিয়েছিলাম হিরো হাউসে। সেখানের মজার অনেক স্মৃতি আছে - সে সব স্মৃতির জন্য তাইওয়ান ভ্রমণ নিয়ে কোন একটি ব্লগই লিখে ফেলবো। পরদিন সকালে ড্রোসী এবং এ্যান্জেলা বেবী আমাদের নিতে এসেছিলো। আমরা প্রথম দিন গিয়েছিলাম ন্যাশনাল তাইওয়ান ইউনিভার্সিটি অব আর্টস-এ। সেখানে দুপুরের খাবার খাবো প্রায় পঞ্চাশ জন একসাথে। তাইওয়ানের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, কোরিয়ার ছয় জন ও আমরা দুইজন। খাওয়া শেষে অবশিষ্ট অংশ তিন ভাগে ভাগ করে ভিন্ন ভিন্ন ড্রামে রাখতে হয়েছিল। পঁচনশীল অর্থাৎ খাবারের উচ্ছিষ্ট, প্যাকেট/পলিথিন, চপষ্টিক জাতীয় তিনটি আলাদা ড্রাম, কোনটা ধ্বংস করা হবে আবার কোনটা পুনরায় উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত হবে। যে দশ/এগারো দিন ছিলাম, এটা রুটিন হয়েগিয়েছিল। ধারণা করেছিলাম, ময়লা হয়তো আমাদের দেশের শহরাঞ্চলের মতো সংগ্রহ করে - ময়লার গাড়ি বাড়ি বাড়ি গিয়ে। কিন্তু ভুল ভাঙ্গল ফিরে আসার দিন। শেষ রাতও কাটিয়েছিলাম হিরো হাউসে।
সকালে ঘুম ভেঙ্গে জানালা খুললাম, অনেকদিন রোদ দেখি না। সেই ২২ জানুয়ারি থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত রোদ দেখা হয়নি। পাহাড় দেখেছি, বরফপাত দেখেছি, সবুজ অঞ্চল, নদী, বৃষ্টি এমন কি নাক বোঁচা সুন্দরী নারী দেখেছি, কিন্তু রোদ দেখা হয়নি। ঐ দিন সকালে মিষ্টি রোদ উঁকি দিচ্ছিল পর্দার ফাঁকা দিয়ে, সে রোদ উপভোগের জন্য জানালা খুলে বাইরে তাকালাম। কি অপূর্ব মিষ্টি রোদ। সাধারণত এত ঠান্ডায় আমরা থাকতে অভ্যস্থ না, তাই রোদ গায়ে লাগাতে লাগাতে নিচে তাকালাম, দেখি এক লোক মটর সাইকেল চালিয়ে এসে ময়লা ফেলছে নির্দিষ্ট স্থানে, পরে আরো একজন ফেলল। বুঝলাম কালচার এটা যে, যার ময়লা সে পৃথক করে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিয়ে যাবে।
আমাদের দেশ, আমাদের সম্পদ আর ভালবাসার সাথে অন্যদের বেশ কিছু পার্থক্য দেখা যায়। আমাদের ভালবাসা হচ্ছে - নিজ স্বার্থ দেখে, দুর্নীতি করে সম্পদের পাহাড় গড়া আর দেশকে রসাতলে পাঠানো।