১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

হাওরের সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড কৃষি নির্ভর। হাওর অঞ্চলের মানুষ প্রধানত বোরো ধানের উপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করে। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের (বিশেষ করে পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট অকাল বন্যা) কারণে দরিদ্র জনগণ কোনো কোনো বছর এ ফসল ঘরে তুলতে পারে না। এ ধরনের অকাল বন্যায় যাতে কৃষকের ফসল হানি না হয় তার জন্য সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) এর মাধ্যমে হাওর এলাকায় ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ ও পুরাতন বাঁধ সংস্কার করে থাকে। সুনামগঞ্জ হাওর অঞ্চলের বোরো ফসল রক্ষার্থে ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জ পাউবো জেলার ১৩১ টি হাওরের জন্য প্রায় ৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের কাজ করে। বাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের জন্য টেন্ডার ও পিআইসি (প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি) পদ্ধতির মাধ্যমে এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হয়। ২০১৭ সালের মার্চ-এপ্রিল মাসে ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ফসল রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে হাওরের দুই লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমির প্রায় ৮২ শতাংশ থেকে ৯০ শতাংশ বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়।  গত ২০১৭-১৮ অর্থ বছর থেকে হাওরে ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে টেন্ডার পদ্ধতির পরিবর্তে পিআইসি পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, যা এ বছরও অব্যাহত আছে। ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে ৩৭টি হাওরে বোরো ফসল রক্ষার্থে ৫৫৩টি প্রকল্পের আওতায় ৯৩ কোটি ৪৭ লাখ টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়।  গত প্রায় ৩০ বছরের মধ্যে সুনামগঞ্জের হাওরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদীগুলোর নাব্যতা রক্ষার জন্য কোনো প্রকল্প বাস্তবায়িত না হওয়ায় ফসল রক্ষার জন্য নির্মিত এসকল সাময়িক বাঁধ জনগণের খুব বেশি কাজে আসছে না বলে বিভিন্ন গবেষণায় প্রতীয়মান হয়েছে। তাছাড়া পিআইসি গঠনে দীর্ঘসূত্রিতা ও স্বজনপ্রীতি, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, বরাদ্দ প্রাপ্তিতে বিলম্ব হওয়া, স্বচ্ছ্বতার অভাব, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা, জবাবদিহিতা ও জনসম্পৃক্ততার অভাব এবং দুর্নীতির কারণে জনগণ কাঙ্খিত সুফল পাচ্ছে না। সর্বোপরি জনগণের অংশগ্রহণমূলক নীতিমালার অভাব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলার কারণে হাওরের সার্বিক পরিবেশ ও প্রতিবেশকে সঙ্কটাপন্ন করে তুলছে।
পলিসি ব্রিফ এখানে