বিশেষ সাক্ষাৎকার: ড. ইফতেখারুজ্জামান

প্রক্রিয়া জটিল হলেও বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনা যাবে

প্রকাশকাল: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ড. ইফতেখারুজ্জামান। দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক। রাষ্ট্র সংস্কারের অংশ হিসেবে সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ছয়টি কমিশন গঠন করেছে। এর মধ্যে দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাঁকে। এই প্রেক্ষাপটে দুর্নীতিমুক্ত ও গণতান্ত্রিক সমাজের সম্ভাবনা সম্পর্কে তিনি কথা বলেছেন প্রথম আলোর সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সোহরাব হাসান

প্রথম আলো: সম্প্রতি এক সেমিনারে আপনি বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যেই লক্ষ্যে আন্দোলন করেছে, সেটি এখনো পূরণ হয়নি। এ ক্ষেত্রে কোনো ঘাটতি দেখছেন কি?

ইফতেখারুজ্জামান: আমি আগেও বলেছি, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের একটি পর্ব শেষ হয়েছে। স্বৈরাচারী শাসনের অবসান হলো। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ধারায় দেশকে পরিচালিত করার অভূতপূর্ব সুযোগ তৈরি হয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতারা যে নতুন বাংলাদেশ তৈরি তথা রাষ্ট্র সংস্কারের কথা বলেছেন, সেটা যেমন অপরিহার্য তেমনি সময়সাপেক্ষ। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পরও আমরা নতুনভাবে যাত্রা শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্নও পূরণ হয়নি। বাইরের অনেকে আমাদের কাছে প্রশ্ন করতেন, এই যে মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটছে, দুর্নীতি-অপশাসন জেঁকে বসেছে, এর বিরুদ্ধে কেন গণ-আন্দোলন হচ্ছে না?

শ্রীলঙ্কারও উদাহরণ দিতেন তাঁরা। শ্রীলঙ্কার আন্দোলনে হাতে গোনা কয়েকজন জীবন দিয়েছেন। কিন্তু সেখানে একজনকেও পুলিশ গুলি করে মারেনি। কিন্তু আমাদের শঙ্কা ছিল বাংলাদেশে সে রকম অবস্থা হলে পুলিশ পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারবে। বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। শত শত মানুষের আত্মত্যাগ তো আমরা বৃথা যেতে দিতে পারি না। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো ক্ষমতাসীনেরা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতে চান। এই লক্ষ্যে তাঁরা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর করে দেন। ছাত্ররা সেই ব্যবস্থার পরিবর্তন বা সংস্কারের কথা বলেছেন। রাষ্ট্র সংস্কারের অপরিহার্য লক্ষ্য হতে হবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্তর্নিহিত শিক্ষা গ্রহণ করে ক্ষমতার রাজনীতির অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করে জনকল্যাণমূলক রাজনীতির প্রবর্তন করা, যার মূল দায়িত্ব রাজনৈতিক দলগুলোকেই নিতে হবে।

প্রথম আলো: ৮ সেপ্টেম্বর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তী সরবারের এক মাস পূরণ হলো। কী কী পরিবর্তন লক্ষ করলেন?

ইফতেখারুজ্জামান: কোনো সরকারের সাফল্য-ব্যর্থতা বিচার করার জন্য এক মাস খুবই কম সময়। অন্তর্বর্তী সরবারের ক্ষেত্রে তো বটেই; তারপরও তাদের নেওয়া বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপের কথা মনে করতে পারি। প্রথমত জুলাই-আগস্ট বিপ্লবে নিহত ও আহতদের পরিবারকে পুনর্বাসনের উদ্যোগ ও জুলাই বিপ্লব স্মৃতি ফাউন্ডেশন গঠন। এ ছাড়া সরকার হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা বলেছিলাম, তদন্তকাজটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে হতে হবে। সরকার সেটা মেনে নিয়েছে। সরকার ভেঙে পড়া আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের চেষ্টা চালাচ্ছে। যদিও এখনো স্বাভাবিক হয়েছে বলা যাবে না। ক্ষমতার পালাবদলের পর অনেক স্থানে মব জাস্টিস হয়েছে। জোরপূর্বক পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। এটা কাঙ্ক্ষিত নয়। রাষ্ট্রের সংস্কার মানে ব্যবস্থার সংস্কার। সরকারের পক্ষ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বেশ কিছু ঘোষণা এসেছে। অর্থপাচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কালোটাকা সাদা করার বিধান বাতিল করা হয়েছে, যদিও তা কতটুকু পরিপূর্ণ তা পরিষ্কার নয়। এগুলো ইতিবাচকই বলতে হবে। সরকারের কাছে জনগণের বিশাল প্রত্যাশা তৈরি হয়েছে। সেটা পূরণ করতে সময় লাগবে। বহুমাত্রিক দুঃশাসনের তো প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করা হয়েছিল।

প্রথম আলো: দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে টিআইবি। বাংলাদেশে দুর্নীতি যে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে, এর জন্য কারা বেশি দায়ী বলে মনে করেন—আমলাতন্ত্র, ব্যবসায়ী না রাজনীতিক? সরকার পরিবর্তনের পর রাজনৈতিক নেতৃত্ব বদলালেও আমলাতন্ত্র ও ব্যবসায়ীরা তো বহাল তবিয়তে আছেন।

ইফতেখারুজ্জামান: আপনি যে তিন শ্রেণির কথা বলেছেন, তাদের মাধ্যমেই বড় বড় দুর্নীতি হয়ে থাকে। তিন পক্ষের পারস্পরিক যোগসাজশে এটা হয়। তবে রাজনীতিকেরা যেহেতু দেশ চালান, তাঁদেরই বেশি দায় নিতে হবে। রাজনৈতিক আশ্রয় প্রশ্রয় পেয়েই আমলা ও ব্যবসায়ীরা দুর্নীতি করে থাকেন। ক্ষমতার পালাবদলে সাবেক সরকারের মন্ত্রী ও নেতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর অর্থ এই নয় যে সমাজে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে গেছে, বা চটজলদি বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা তো দেখতে পাচ্ছি, বিভিন্ন স্থানে দখলবাজি, চাঁদাবাজি শুরু হয়েছে। যাঁরা মনে করছেন ক্ষমতায় এসে গেছেন বা আসছেন, তাঁরাই এগুলো করছেন। লক্ষণ তো ভালো দেখছি না।

প্রথম আলো: সমাজ থেকে দুর্নীতির শিকড় উপড়ে ফেলার উপায় কী?

ইফতেখারুজ্জামান: দুর্নীতি বন্ধের জন্য কোনো রকেট সায়েন্সের প্রয়োজন হয় না। এ ক্ষেত্রে আমরা অন্যান্য দেশের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি। গত ১৫ বছরই শুধু দুর্নীতি হয়নি। সব সরকারের আমলেই দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। আমরা তো দেখলাম আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই সরকারের আমলে বাংলাদেশ দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হলো। যারাই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত, সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেসব প্রতিষ্ঠান দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে দুদক, এনবিআর ইত্যাদির দলীয়করণ মুক্ত করার পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানো এবং জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কে ক্ষমতায়, আর কে বাইরে সেটা দেখলে চলবে না। দুদক আগের সরকারের শতাধিক নেতা-মন্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে। আমরা তাদের দুর্নীতির তথ্য-উপাত্ত তাদের কাছে আগেই পেশ করেছি। কিন্তু তারা ক্ষমতায় থাকতে দুদক ব্যবস্থা নেয়নি। দুদকের কর্মসংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে, ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। অন্যদিকে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা জেল থেকে মুক্ত হয়ে যাচ্ছে। এগুলো কীভাবে করা হয়েছে আমরা জানি না। এ কারণেই আমরা প্রাতিষ্ঠানিক দক্ষতা ও সততার ওপর জোর দিচ্ছি।

প্রথম আলো: সরকারের পরিবর্তনের পর দুদকের কার্যক্রমে কতটা পরিবর্তন এসেছে? এক দিকে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে। অন্যদিকে বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। দুদক কেন ক্ষমতাসীনদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে না?

ইফতেখারুজ্জামান: পরিবর্তন এটুকু হয়েছে যে তারা লম্ফঝম্প দেখাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ যদি আমলযোগ্য বিবেচিত হয়ে থাকে, এত দিন ধরল না কেন? দুদকের এই প্রবণতা জন্মলগ্ন থেকে। তারা ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ধরে না। ক্ষমতা থেকে কেউ চলে যাওয়ার পর তোড়জোড় দেখায়। আসলে দুদক একটি আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মি ও অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এ কারণেই আমরা বলেছি, দুদককে ঢেলে সাজাতে হবে।

প্রথম আলো: বাংলাদেশে অন্যতম প্রধান আলোচ্য বিষয় হলো অর্থ পাচার। টিআইবিসহ পাঁচটি সংস্থার পক্ষ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে বিভিন্ন দেশের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। কোনো সাড়া পেয়েছেন কি?

ইফতেখারুজ্জামান: বাংলাদেশ এখন পাচারকারী দেশগুলোর সামনের সারিতে। বিশাল অঙ্কের অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যাঁরা ভাবেন পাচার করা অর্থ ফেরত আনা যাবে না, তাঁরা ভুল করছেন। তবে ফেরত আনতে হলে দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। পাচারের বিরুদ্ধে আমাদের ভালো আইন আছে, পাচার করা অর্থের তিন গুণ জরিমানা ছাড়াও কারাদণ্ডের বিধান আছে।

সমস্যা হলো যাঁরা পাচার করেন, তারা অত্যন্ত ক্ষমতাবান ব্যক্তি। যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে, সেসব দেশের কাছে আমরা চিঠি লিখেছি, তারা যেন সেই অর্থসম্পদ ফ্রিজ করে বা আটকে দেয়। ওই অর্থ যাতে পাচারকারী ব্যক্তি তুলে নিতে না পারেন। আগে সুইজারল্যান্ডে বেশি পাচার হতো। এখন যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর ও আরব আমিরাতেও বিপুল পরিমাণ পাচার করা অর্থ যাচ্ছে। আমরা এসব দেশের সহযোগিতা চেয়েছি এবং ফলোআপ করছি। আমরা আশা করছি, ভালো ফল পাব। তবে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে দুদক ও বিএফআইইউসহ অন্যান্য দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে।

প্রথম আলো: এস আলম গ্রুপের মালিক মো. সাইফুল আলম সপরিবার বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। সে ক্ষেত্রে তাঁর পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে কোনো সমস্যা হবে কিনা?

ইফতেখারুজ্জামান: আমি মনে করি না কোনো সমস্যা হবে। তিনি কোন দেশের নাগরিক সেটা বিচারের বিষয় নয়। তিনি বাংলাদেশ থেকে অর্থ পাচার করেছেন কি না, সেটাই বিবেচ্য। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করলেও তিনি যদি অপরাধ করে থাকেন, তাঁর বিচার হবে। অন্য পলাতক আসামির ক্ষেত্রেও যা প্রযোজ্য। এস আলমের নাগরিকত্ব ত্যাগ কিংবা সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের পলাতক থাকা বিচারের ক্ষেত্রে বাধা হতে পারে না। পাচার করা অর্থ ফেরত আনতে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান যথা দুদক, সিআইডি, এনবিআর, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফইইউ), অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে।

প্রথম আলো: টিআইবির পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারে আপনারা কিছু প্রস্তাব দিয়েছেন। যেমন এক ব্যক্তির দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী না হওয়া। একই ব্যক্তির একাধিক শীর্ষ পদে না থাকা। সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন। কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো এগুলো মানবে কি?

ইফতেখারুজ্জামান: ইতিমধ্যে কিছু কিছু রাজনৈতিক দল বলেছে, এটা সমর্থনযোগ্য। অন্তর্বর্তী সরকারের মনোভাবও ইতিবাচক। কিন্তু মূল দায়িত্বটি রাজনৈতিক দলের। অন্তর্বর্তী সরকার একটি আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো তৈরি করে দেবে। সেটি বাস্তবে রূপ দেবে রাজনৈতিক দলগুলোই। বিশেষ করে যাঁরা ক্ষমতায় আসবেন। আমাদের সুপারিশের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সংস্কৃতি পরিবর্তনের কথা আছে। সেটা খুব আলোচিত হয়নি। বেশির ভাগ দল ক্ষমতা ও ব্যক্তিস্বার্থকেন্দ্রিক রাজনীতি করে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। দলের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। আমরা বলেছি, রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য একটি নৈতিক আচরণবিধি থাকতে হবে। রাজনৈতিক দলের সব স্তরে নেতৃত্ব নির্বাচন হতে হবে উন্মুক্ত ভোটের মাধ্যমে। পরিবারতন্ত্রের অবসান ঘটাতে হবে। দলীয় একনায়কত্বকে চ্যালেঞ্জ করতে হবে। একই সঙ্গে আমরা আনুপাতিক ভোটের কথা বলছি। এতে প্রার্থী নিয়ে যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে হানাহানি হয়, সেটা বন্ধ হবে।

প্রথম আলো: অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে যে ছয়টি কমিশন করেছে, তার একটি হলো দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন। এটি করা হয়েছে আপনাকে প্রধান করে। এ সম্পর্কে যদি আপনার পরিকল্পনার কথা জানান।

ইফতেখারুজ্জামান: পরিকল্পনা করব পুরো কমিশন গঠনের পর সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করে। তবে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করার লক্ষ্যে কার্যকর পদ্ধতি নিশ্চিত করার ওপর। তা ছাড়া দুদককে আমলাতন্ত্রের হাতে জিম্মিদশা থেকে মুক্তির উপায় বের করতে হবে। দুদক আইন ও দুদকের স্বাধীনভাবে কাজের পথে প্রতিবন্ধক অন্যান্য আইন ও নীতিমালার যুগোপযোগী সংস্কার প্রাধান্য পাবে। কিছু নতুন আইন, যেমন স্বার্থের দ্বন্দ্ব নিরসন, বেনামি মালিকানা স্বচ্ছতা এবং কমন রিপোর্টিং স্ট্যান্ডার্ডে অভিগম্যতা, ইত্যাদি প্রবর্তন করতে হবে। অর্থপাচারসহ উচ্চপর্যায়ের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে সহযোগী হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত পূর্বোল্লিখিত সংস্থাগুলোর দলীয় প্রভাবমুক্ত করার পাশাপাশি সক্ষমতা বাড়ানোর উপায় বের করতে হবে। সর্বোপরি দুদকের সংস্কারের বিষয়টিকে রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে আমূল সংস্কারের অপরিহার্যতা থেকে আলাদা করে দেখার সুযোগ নেই। কারণ, একটি আদর্শ দুদক যদিও বা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়, রাজনীতি ও আমলাতন্ত্রে মৌলিক পরিবর্তন ছাড়া দুদক তার ম্যান্ডেট আশানুরূপ পালন করতে পারবে, এমন প্রত্যাশা করা অমূলক।

প্রথম আলো: আওয়ামী লীগ সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ), সাইবার নিরাপত্তা আইনসহ (সিএসএ) নানা আইন দিয়ে সেই অধিকার খর্ব করেছে। সরকার পরিবর্তনের পরও তো আইনগুলো রয়ে গেছে। খুলনায় এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সিএসএ আইনে মামলাও হয়েছে। আপনার মন্তব্য কী?

ইফতেখারুজ্জামান: আমি বলব, বিগত কর্তৃত্ববাদী সরকারের সময় মানবাধিকার লঙ্ঘনের বহুমাত্রিক ঘটনা ঘটেছে। মানবাধিকারের দাবিকে অপরাধে রূপান্তর করা হয়েছে। সেটা হয়েছে ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করার জন্য। তারা মানুষের বাক্‌স্বাধীনতা হরণ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করার কাজে এসব আইন ব্যবহার করেছে। সরকারবিরোধী আন্দোলনের সময় এটা আরও বেশি মাত্রায় ব্যবহার করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসে বলেছে, এসব নিবর্তনমূলক আইন পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হবে। আমরা আস্থা রাখতে চাই। খুলনায় যে ঘটনা ঘটেছে, আমরা তাতে অবাক হইনি। সাম্প্রতিক আন্দোলনের ফলে যেমন অভূতপূর্ব সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি শঙ্কাও আছে।

প্রথম আলো: আপনাকে ধন্যবাদ।

ইফতেখারুজ্জামান: আপনাকেও ধন্যবাদ।

দৈনিক প্রথম আলো
১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
লিংক